কোনও শিশু জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই শিশুটি জন্মের পর তার মা-বাবা আর আত্মীয়দের মুখে দেখা গেল শঙ্কার ছায়া।
কারণ, শিশুটি আর দশটি সাধারণ শিশুর মতো হয়নি। শিশুটির যৌনাঙ্গ নেই, নেই পায়ুপথও। নেই-এর তালিকায় আরো যুক্ত হয়েছে নাভি। তিনটি জরুরি অঙ্গবিহীন জন্ম নেওয়া উদ্ভট শিশুটির জায়গা হয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে শিশুটি। গৃহবধূ হীরা বেগম শিশুর জন্ম দিয়েছেন।
সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুর মূত্রনালী, জনননালী এবং মলদ্বার অর্থাৎ পায়ুপথের সৃষ্টি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু শিশু অসম্পূর্ণ পায়ুপথ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ ধরনের ত্রুটির দুর্লভ প্রকারটি হলো ক্লোয়েক্যাল ম্যালফরমেশন।
জন্ম নেওয়া প্রতি ৫০ হাজার থেকে সোয়া লাখ শিশুর মধ্যে একজনের শরীরে এ ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে, যাদের শরীর থেকে পায়খানা, প্রস্রাব বের হবার স্বাভাবিক পথ থাকে না। ফলে সার্জারির মাধ্যমে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেসব নির্গত করতে পথ তৈরি করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, শিশুটির জন্ম দিয়েছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মুণ্ডুপাশা গ্রামের হীরা বেগম। বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের ফেয়ার ক্লিনিকে গত মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে সার্জারি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। হীরা বেগম ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। সদ্যজাত সন্তানের বাবা ইউসুফ সরদার।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হীরা বেগম মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নগরীর ফেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী। কিন্তু জন্মের পরপরই তার শিশুর জন্মগত কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলো চিকিৎকদের নজরে আসার পর ওই রাতেই শিশুটিকে শের-ই- বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক বলেন, “মূত্রনালী, জনননালী এবং মলদ্বার অর্থাৎ পায়ুপথের সৃষ্টি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু শিশু অসম্পূর্ণ পায়ুপথ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ ধরনের ত্রুটির দুর্লভ প্রকারটি হলো ক্লোয়েক্যাল ম্যালফরমেশন। জরুরি ভিত্তিতে শিশুটির পায়ুপথ তৈরি করা প্রয়োজন। অপর বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষে। ” সে অ্যাডাল্ট হলে তার পুরুষাঙ্গ প্ল্যান্ট করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার সাহা বলেন, “শিশুটির ত্রুটির দুর্লভ প্রকারটি হলো ক্লোয়েক্যাল ম্যালফরমেশন। মায়ের গর্ভাবস্থায় শিশুটির পায়ুপথ ও পুরুষাঙ্গ ডেভেলপড হয়নি। শিশু বিভাগে এ রোগের চিকিৎসা না থাকায় তাকে সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ” তিনি বলেন, “দেশে শিশু মৃত্যুর ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে জন্মগত ত্রুটির কারণে। তাই জন্মগত ত্রুটি এড়াতে হলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে হবে। কম বয়সে কোনওভাবে মা হওয়া যাবে না। “
স্ত্রীরোগবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জি কে চক্রবর্তী বলেন, “পরিকল্পনা করে গর্ভধারণ করলে জন্মগত ত্রুটি অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। কেউ গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে তিন মাস আগে থেকেই তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই সময় শিশুর শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক হয়। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই প্রয়োজন। ” তিনি আরো বলেন, “গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মাথায় বাচ্চার শারীরিক ত্রুটি রয়েছে কিনা- তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আর যদি কারও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে জন্মগত ত্রুটির ইতিহাস থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই পরিকল্পিত গর্ভধারণ করতে হবে।
শেবাচিম পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “জটিল এ চিকিৎসার ব্যবস্থা মেডিক্যালে নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নিতে তার অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।