ভারতের জনপ্রিয় ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং পনের বছর আগে দুই মহিলা ভক্তকে ধর্ষণ করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
ভারতের উত্তরের শহর পাঁচকুলা যেখানকার আদালত এই রায় ঘোষণা করেছেন সেখানে রায় ঘোষণার পর ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।
রাজ্য দু’টিতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেমেছে ৫৭ হাজার পুলিশ কর্মী – যাদের মধ্যে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীও। যাকে নিয়ে দেশ জুড়ে এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আসুন জেনে নিই কে এই
রাম রহিম।১৯৬৭-র ১৫ অগস্ট রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলার শ্রী গুরুসর মোদিয়া গ্রামে রাম রহিমের জন্ম। গ্রামের স্কুল থেকেই পড়াশোনা করেছেন তিনি।
১৯৯০-এ ডেরা সাচা সৌদা সংগঠনের প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন। রাম রহিমের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয় রাম রহিম। রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণের মতো কাজ করে থাকেন নিয়মিত। অনলাইনে যোগের প্রশিক্ষণও দেন তিনি। মেয়েদের জন্য হোস্টেল, হাসপাতাল এবং যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের মতো কাজ করেন।
রাম রহিমের প্রায় ৫ কোটি ভক্ত। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শহর ও গ্রামাঞ্চলে ডেরা সাচার বহু কেন্দ্র রয়েছে।
হরিয়ানার সিরসায় প্রায় ৮০০ একর জমির উপর ডেরা-র ক্যাম্পাস রয়েছে। তাঁর সংস্থা এমএসজি ব্র্যান্ডের অর্গ্যানিক মধু, নুডলস বিক্রি করে। ২০০৩-এ বিশ্বের বৃহত্তম রক্তদান শিরিবের আয়োজন করে গিনেজ রেকর্ড করে ডেরা সাচা।
রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট প্রভাবশালী রাম রহিম। ২০১৪-য় হরিয়ানার নির্বাচনে তাঁর সংগঠন বিজেপি-কে সমর্থন করে। ২০১৫-য় দিল্লির নির্বাচনে বিজেপি-কে খোলাখুলি সমর্থন করে। ওই বছরেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচার করেন তাঁর অনুগামীরা।
রাম রহিমের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ২০০২-এ সিরসার এক সাংবাদিক রাম চন্দ্র ছত্রপতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই একই বছরে ডেরা-র ম্যানেজার রঞ্জিত সিংহকে খুনের অভিযোগ ওঠে।
২০০২-এ এক শিষ্যা রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে ওই শিষ্যা অভিযোগ করেন, অন্য শিষ্যাদেরও হরিয়ানার সিরসায় ডেরা চত্বরে একাধিক বার ধর্ষণ করেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সিবিআইকে রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করতে নির্দেশ দেয়।
রাম রহিমের দুই শিষ্যার মধ্যে এক জন সিবিআইকে গোপন জবানবন্দিতে জানান, তিনি ডেরা প্রধানের চেম্বারে ঢোকার পরই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এবং তিনি দেখেন রাম রহিম বড় স্ক্রিনে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখছেন।
রাম রহিমের দুই শিষ্যার মধ্যে এক জন সিবিআইকে গোপন জবানবন্দিতে জানান, তিনি ডেরা প্রধানের চেম্বারে ঢোকার পরই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এবং তিনি দেখেন রাম রহিম বড় স্ক্রিনে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখছেন।
ধর্মীয় গুরু ছাড়াও এক জন গায়ক, অভিনেতা হিসাবেও তাঁর পরিচয় রয়েছে। তিনি এমএসজি: দ্য মেসেঞ্জার, এমএসজি২ দ্য মেসেঞ্জার, এমএসজি: দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট নামে তিনটি ছবিও করেন।
ভারতে যে ৩৬ জন ভিভিআইপি জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান, রাম রহিম তাঁদের মধ্যে এক জন।
ব্রিটেনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৬-য় সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা, নির্দেশক এবং লেখকের সম্মান পেয়েছেন রাম রহিম।