স্বাধীনতার পর দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধ আসতো আমদানির মাধ্যমে। আশার কথা হলো, এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ পূরণ হচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত ওষুধে। পাশাপাশি ইউরোপের ২৬টি দেশসহ বিশ্বের ১২৭টি রাষ্ট্রে ওষুধ রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ড্রাগ অ্যান্ড কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘দেশে ওষুধের বাজার ১৬ হাজার কোটি টাকার। অভ্যন্তরীণ এ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১২৭টি দেশে ওষুধ রফতানি করতে পারছি। এটা বিস্ময়কর!’
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘বিশ্বের ১২৭টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। দেশে বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদিত হওয়ায় দিনকে দিন রফতানির পরিমাণ বাড়ছে।’
ভেজাল ও মানহীন ওষুধের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে প্রশাসন প্রতিদিন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত ৩৪টি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এছাড়া আমরাও প্রায় প্রতিদিন অভিযানে নামছি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মানহীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কোনোভাবেই যাতে এ খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখছি।’
সংশ্লিষ্টদের আশা, মান বজায় রাখতে পারলে রফতানির পরিমাণ দিনে দিনে আরও বাড়বে। এমনকি বিশ্বের ওষুধ বাণিজ্যের ১০ শতাংশ নিজেদের অধীনে নেওয়া যাবে, যেখান থেকে বছরে আয় হবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট ২৬৮টি অ্যালোপ্যাথিক, ২০৭টি আয়ুর্বেদিক, ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক, ৩২টি হারবাল এবং ২৬৭টি ইউনানি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি ওষুধ কোম্পানি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১২৩টি দেশে মোট ৮৩৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি করেছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালে বিশ্বের ৮৭টি দেশে ৪২১ কোটি ২২ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি হয়। পরের বছর রফতানি অর্থের পরিমাণ ৫৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৩ সালে অর্থের পরিমাণটা দাঁড়ায় ৬০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে ৯৫টি দেশে ৭১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে ১০২টি দেশে ৭৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা, নোভারটিস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস, ইনসেপ্টা ফার্মা, রেনেটা লিমিটেড, এরিস্টো ফার্মা, অপসোনিন, বীকন ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, এসিআই লিমিটেড, পপুলার ফার্মা, ইবনে সিনা, রেডিয়ান্ট, নভো হেলথ কেয়ার ছাড়া আরও কিছু কোম্পানির ওষুধের চাহিদা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওষুধ রফতানির চলমান ধারা অব্যাহত রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেজন্য নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।’
এদিকে জাতীয় ওষুধ নীতি-২০১৬-এর খসড়া অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেছেন, ‘ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে, যার নাম হবে ন্যাশনাল রেগুলেটরি অথোরিটি (এনআরএ)। এ কর্তৃপক্ষ ওষুধ নিবন্ধন ও কাঁচামাল নিশ্চিতকরণের কাজ করবে।’
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘দেশে তৈরি ওষুধের মান আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন রফতানির দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার সময়। রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে বিদেশ থেকে আনা কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমাতে হবে।’
ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হবে জানিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি আয়োজিত ‘এশিয়া ফার্মা এক্সপো-২০১৭’ অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত সরকার।’