ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিকাশ হ্যাকার চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো রানা খান, মোঃ লিটন, মোঃ নয়ন শেখ, মোঃ টিটু মোল্লা, মোঃ সালমান মোল্লা, আকাশ শেখ, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, মোঃ রহিম ও মোঃ তানজিল। গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি আইফোনসহ ১০টি মোবাইল ফোন, ৩৭টি সিম ও ১টি প্রোভক্স গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টম্বর) রাজধানীসহ ফরিদপুরের মধুখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২.০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম-বার ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন বিভিন্ন বিকাশের দোকানে ক্যাশ ইন রেজিষ্ট্রারের নম্বর লেখা পাতাটির ছবি সু-কৌশলে তুলতেন। এরপর হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন গ্রামে থাকা মূল হ্যাকারদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। এজন্য নম্বর লেখা প্রতিটি পাতা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতেন। মূল হ্যাকাররা ছবির নম্বর দেখে বিকাশের দোকানদার সেজে ভিকটিমকে বিভিন্ন অপারেটরের সিম থেকে কল দিতেন এবং বলতেন তার দোকান থেকে ভুলে কিছু টাকা ভিকটিমের নম্বরে চলে গেছে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিকটিমের একাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিকাশ অফিস থেকে তাকে কল দেওয়া হবে। একটু পর মূল হ্যাকার বিশেষ অ্যাপ ব্যাবহার করে বিকাশ অফিসের নাম করে বিকাশ সেন্টারের মূল নম্বরের সদৃশ্য নম্বর হতে ভিকটিমকে কল দিতেন। ভিকটিমের নম্বরে তখন +০১৬২৪৭ থেকে কল আসে। কলসেন্টারের উক্ত ব্যক্তি ভিকটিমের নম্বরে একটি OTP (one time password) প্রেরণ করতেন এবং কৌশলে প্রেরিত OTP ভিকটিমের নিকট জানতে চায়। ভিকটিম প্রতারিত হয়ে তার নিকট প্রেরিত OTP এবং PIN নম্বর বলে দেয়। ভিকটিম অনেক সময় পিন নম্বর বলতে না চাইলে হ্যাকার ভিকটিমকে একটি অংক করার জন্য বলতেন এবং অংক করার ছলে ভিকটিমের নিকট থেকে সু-কৌশলে পিন নম্বর জেনে নিতেন। OTP এবং PIN জানার পর হ্যাকাররা ভিকটিমের একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন। হ্যাকার ভিকটিমের একাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ভিকটিমের একাউন্টের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে পাঠিয়ে দিয়ে হ্যাকারদের মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা ক্যাশ আউট করে নিতেন। এজন্য উক্ত ব্যক্তিকে প্রতি ১০ হাজারে ১০০০ টাকা প্রদান করা হত। টাকা ক্যাশ আউট করার পর উক্ত ব্যক্তি পূণরায় হ্যাকারদের পার্সোনাল বিকাশ একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিতেন। হ্যাকাররা উক্ত টাকা মধুখালী ফরিদপুরের বিভিন্ন ব্যক্তি, যারা প্রতি হাজারে ৪০০ টাকা করে কমিশন গ্রহন করে ক্যাশ টাকা হ্যাকারদের নিকট প্রদান করতেন। হ্যাকাররা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিষ্ট্রিকৃত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টের প্রতিটি সিম ৩০০০-৪০০০ টাকায় ক্রয় করতেন। হ্যাকাররা প্রতারণার কাজে আইফোন ব্যবহার করতেন। তারা সকলেই বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বর্তমান পেশা হিসেবে এই প্রতারণার ব্যবসা করে আসছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম-বার আরো বলেন, বিকাশ হ্যাকার চক্র থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিকাশ এজেন্ট সেজে কেউ ফোন করে পিন নাম্বার অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে না দেয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য যে, বিকাশ প্রতারণার ঘটনায় ভাটারা থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ একটি মামলা রুজু হয়।