ডিএমপি নিউজঃ চাই সংসার জীবনে একটু সচ্ছলতা ও শান্তি। একটু ভালো ভাবে বেঁচে থেকে দারিদ্রতাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা কে না লালন করে মনের কুটিরে! সেই ইচ্ছাকে পরিপূর্ণতা আনতে অনেকে ছুটছেন প্রিয় মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে বিদেশ পানে। কে জানে তার জন্য ঐ অপরিচিত জায়গায় কি অপেক্ষা করছে? হয়তো কেউ সফলতা পাচ্ছে, না হয় বিভীষিকাময় হতাশার রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা কেউ চাইনা আমাদের ভাগ্যান্নেষী যোদ্ধারা বিদেশ যেয়ে প্রতারিত হয়ে অনিশ্চিত জীবনে প্রবেশ করুক। তাই আসুন, জেনে নিই বিদেশ যাওয়ার পূর্বে যেসব বিষয় অবশ্যই জানতে হবে।
নাম নিবন্ধনঃ
বর্তমানে সরকারিভাবে নিবন্ধন করা ছাড়া এখন আর কারও বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সুযোগ নেই। আপনাকে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার পূর্বে ঢাকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কিংবা আপনার জেলার জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সারা দেশের ইউনিয়ন ও নগর তথ্য সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে গত বছর মালয়েশিয়ায় এবং পরে অন্যান্য দেশে কর্মী নেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন শুরু করে। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি চাইলে তার নাম নিবন্ধন করতে পারবেন।
সরকারি নিয়মে নাম নিবন্ধনের পর দালালের খপ্পরে না পড়ে আপনি যেকোনো বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। দেশে সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রায় এক হাজার বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, যাদের প্রত্যেকের একটি করে লাইসেন্স নম্বর আছে। এ তালিকা থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম জেনে নিতে পারেন।
ব্যাংক ঋণের সুবিধাঃ
প্রবাসীদের কল্যাণে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের দেশের বিদেশগামীরা অধিকাংশ গরীব হওয়ায় অনেকেই বিদেশে যাওয়ার জন্য জমিজমা বিক্রি করে। আবার অনেককে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে বিদেশগামীদের ঋণ দিয়ে থাকে। এ জন্য তাঁকে বিদেশে চাকরির নিয়োগপত্র দেখালেই চলবে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি আরও অনেক ব্যাংকই এখন বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বল্পসুদে ঋণ দিচ্ছে।
বিদেশ যাওয়ার আগে জেনে নিন কি করবেন:
১। পাসপোর্ট ছাড়া আপনি কোন দেশে যেতে পারবেন না। বিদেশ যেতে হলে প্রথমেই দরকার পাসপোর্ট। তাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিজেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এমআরপি পাসপোর্ট করুন।
২। বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। আপনি যে দেশে যাবেন, সেই দেশের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
৩। আপনাকে যে কোম্পানি বিদেশে চাকরি দিচ্ছে, সেখানকার চাকরির শর্ত জেনে নিন। শর্তে বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়া, ছুটি, চিকিৎসাসহ কোম্পানির সব সুযোগ-সুবিধা জেনে নিন। পাসপোর্টে যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের ভিসার যাবতীয় কাগজপত্র আছে কি না দেখে নিন।
৪। ‘এমপ্লয়মেন্ট ভিসা’ নিয়ে চাকরি জন্য বিদেশ যেতে হয়। বিমানের টিকিট কাটার সময় অবশ্যই প্লেন ছাড়ার সময় ও এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর সময় জেনে নিন।
৫। বিদেশে যাত্রার কয়েক দিন পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ভিসা সিলসহ পাসপোর্ট, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র, মেডিকেল সনদ, চাকরির চুক্তি, স্মার্ট কার্ড, যে দেশে যাবেন, সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা এগুলো যত্ন করে রাখুন। প্রয়োজনে কাগজপত্রের ফটোকপি পরিবারের কাছে রেখে যান।
৬। বিদেশ যাওয়া চূড়ান্ত হলে আপনার বাড়ীর নিকটতম সুবিধাজনক কোনো ব্যাংকে দুটি হিসাব খুলুন। একটি হিসাব নিজের ও অন্যটি পরিবারের কারও নামে। পরিবারের অ্যাকাউন্টে পরিবারের বা সংসারের খরচের অর্থ পাঠান। আর নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা জমাতে পারেন।
৭। আমাদের দেশের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগই আসে রেমিটেন্স থেকে। বিদেশে থাকা অবস্থায় একটি বড় সমস্যা টাকা পাঠানো। মনে রাখবেন, শুধু সরকার অনুমোদিত ব্যাংক বা মানি একচেঞ্জের মাধ্যম ছাড়া টাকা পাঠানো বৈধ না। আপনি যেখানে থাকুন অবশ্যই সে দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলুন।
এবার জেনে নেয়া যাক ‘বাংলাদেশ জনশিক্ত, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’ বিদেশ যাওয়ার পূর্বে জনসাধারণকে কি কি সতর্কমূলক পরামর্শ দিয়েছেঃ
১। বিদেশ গমনেচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
২। ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ) বা রেজিস্ট্রেশন মানেই বিদেশে চাকুরীর নিশ্চয়তা নয়।
৩। কোন ব্যক্তি বা দালাল রেজিস্ট্রেশন বা ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ) করে টাকা চাইলে বা বিদেশে চাকুরী হয়েছে বলে প্রতারণা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় খবর দিন।
৪। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হতে বৈধ রিক্রুটিং এবং কর্মী নিয়োগের সত্যতা জেনে নিন।
৫। নিয়োগ চূড়ান্ত হলে বিদেশ গমনের পূর্বে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হতে আপনাকে অবশ্যই বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) গ্রহন করতে হবে।
৬। বিদেশ যাওয়ার পূর্বে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবেন, প্রয়োজনবোধে জনশিক্ত, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হতে যাচাই করে নেবেন।
৭। চুক্তিপত্রে নিয়োগকর্তার নাম, আপনার নাম, পেশা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি উল্লেখ রয়েছে কিনা পরীক্ষা করে নিন।
৮। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ, চেক/ পে-অর্ডার/ ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সীকে পরিশোধ করবেন এবং এজেন্সীর স্বাক্ষরিত প্রাপ্তি রশিদ গ্রহন করবেন।
৯। বিদেশ গমনের জন্য দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী পরিত্যাগ করে সরাসরি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করুন।
বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসুনঃ
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি): ৮৯/২, কাকরাইল ঢাকা, টেলিফোন, ৯৩৫৭৯৭২।
www. bmet.org.bd
বোয়েসেল: ৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডের ঢাকা। ৯৩৬১৫১৫,৯৩৩৬৫৫১
www. boesl.org.bd
বায়রা: বায়রা ভবন, ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। টেলিফোন: ৮৩৫৯৮৪২, ৯৩৪৫৫৮৭ http://www.baira.org.bd/
রামরু: অভিবাসন বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা রামরুতে গিয়েও যে কোনো তথ্য পেতে পারেন। ঠিকানা: রামরু,৩/৩-ই, বিজয়নগর, টেলিফোন: ৯৩৬০৩৮, ওয়েবসাইট: www. rmmru.net
মোদ্দা কথা জীবন আপনার, আর এই জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে আপনার পরিবারের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা। সবসময় একটি কথা মনে লালন করে বাঁচতে হবে, আপনার কিছু হলে পরিবারের কি হবে, তারা কোথায় যাবে, কি করবে? সুতরাং সতর্কতা অবলম্বন করুন, দেখে শুনে বুঝে তারপর দেশের বাহিরে পা ফেলুন।
ডিএমপি নিউজ/এসআই