স্যাঁতসেতে ঘর, আলো-বাতাসের সেখানে প্রবেশ নিষেধ। অন্ধকার খুপরিতে এক কয়েদির প্রায় ঘাড়ের ওপর অন্য জনের থাকা। নিম্ন মানের খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। জেলখানা বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এই পরিচিত দৃশ্যগুলিই।
কিন্তু জেলের চেনা সংজ্ঞাই যদি বদলে যায় কখনও? সামনের খোলা লনে গা এলিয়ে সান বাথ নেওয়ার ব্যবস্থা, প্রতি ঘরে তুলতুলে নরম বিছানা, টিভি, ফ্রিজ, রঙিন ছবি আর শো-পিসে সাজানো ঘর। দেখে নিজের বাড়ি বা বিলাসবহুল কোনও হোটেলের মতো লাগলেও আসলে কিন্তু এগুলো জেলখানা। পৃথিবীজুড়ে এমনই সমস্ত আরামদায়ক আর বিলাসবহুল জেলের ঠিকানা রইল।
জাস্টিন সেন্ট্রাল লিওবেন: জেলের অন্দরমহল দেখলে যে কোনও তারকা খচিত হোটেল বলে ভুল হতে পারে। এতটাই সুন্দর অস্ট্রিয়ার এই জেলখানা। প্রত্যেক কয়েদির জন্য আলাদা ঘর দেওয়া হয় এখানে। থাকে ব্যক্তিগত বাথরুম, রান্নাঘর, টিভিও। বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জামও রয়েছে এখানে। অবসর সময়ে ক্রিকেট-ফুটবল-বেসবলে ব্যস্ত থাকেন এখানকার বন্দিরা।
আরানজুয়েজ জেল: পারিবারিক জেলখানা হিসাবে খ্যাত স্পেনের এই জেল। পশ্চিমী দুনিয়ায় বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা বেশি। আবার অনেক সময় গার্হস্থ্য হিংসার কারণে জেলেও যেতে হয় বাবা অথবা মা’কে। শিশু বড় হয়ে ওঠে সিঙ্গল পেরেন্টের কাছে। এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়েই ‘প্রিজন ফর ফ্যামিলিজ’ হয়ে উঠেছে এই জেল। এখানে বাচ্চার সঙ্গে বাবা-মাকে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ভাবে সাজানো হয় জেলের ঘর। শিশুদের থাকতেও দেওয়া হয় এখানে।
চ্যাম্প-ডোলোন জেল: একটা সময় ঘিঞ্জি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বদনাম ছিল এই জেলের। একটা সময় ইউরোপের অন্যতম জনবহুল জেলখানা হয়ে উঠেছিল স্কটল্যান্ডের এই জেল। তবে বর্তমানে ভোল বদলে এক্কেবারে ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠেছে চ্যাম্প-ডিলোন। এখন এই জেলের প্রতিটি ঘর সাজানো হয়েছে ছিমছাম করে। প্রত্যেক ঘরে রয়েছে তিন জন করে থাকার ব্যবস্থা।
পনদোক বাম্বু জেল: ইন্দোনেশিয়ার এই জেল স্বাচ্ছন্দ্য আর বিলাসে অভিজাত হোটেলের থেকে কোনও অংশে কম যায় না। প্রতিটি ঘরে ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশন, টিভি-ও রয়েছে এই জেলে।
জেভিএ ফুহলসবুটেল জেল: জার্মানির হামবুর্গে রয়েছে এই জেলটি। ২০১১-তে সংস্কারের পর এই জেলের প্রতিটি ঘরে এখন রয়েছে বিছানা, অতিরিক্ত কাউচ, বাথরুম, কনফারেন্স রুম, লন্ড্রিও।
সোলেনটুনা জেল: প্রত্যেকের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ঘর। আর সেই ঘরে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে সুইডেনের এই জেলে। নরম বিছানা, ব্যক্তিগত বাথরুম, রান্নাঘর, জিম, টিভি সবই আছে এখানে। তবে কয়েদিদের উপর ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালাতে রয়েছে সিসিটিভি ব্যবস্থাও।
হালডেন জেল: অনেক বন্দিই এখানে এলে আর ফিরতে চান না। এমনই সুন্দর নরওয়ের এই জেল। প্রত্যেক কয়েদির জন্য রয়েছে আলাদা ঘর, বাথরুম। অবসর কাটানোর জন্যও রয়েছে নানা ব্যবস্থাও। লাইব্রেরি, রেকর্ডিং স্টুডিও, মাউটেনিয়ারিং সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে এই জেলখানায়।
ওটাগো কারেকশন ফেসিলিটি: নিউজিল্যান্ডের এই জেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব কড়া। যদিও জেলের মধ্যে সুসজ্জিত ঘরে কয়েদিরা থাকেন বেশ বহাল তবিয়তেই। এখানেও অপরাধীদের সমাজে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেয়ারি ফার্মিং, কুকিংয়ের মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া হয় কয়েদিদের।
এইচএমপি অ্যাডিওয়েল: দক্ষিণ স্কটল্যান্ডে রয়েছে এই জেল। বন্দিদের নানা ধরনের কাজ শেখায় এই জেল। অপরাধীদের সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা বরাদ্দ থাকে জেলের জন্য। এই সময়ে তাঁদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে নানা রকমের হাতের কাজ, পেশাভিত্তিক কাজ শেখানো হয়।
ব্যাস্টয় জেল: নরওয়ের ব্যাস্টয় দ্বীপে রয়েছে এই জেল। ১০০ জন বন্দি থাকেন এই জেলে। তবে তাঁদের দেখলে কয়েদি মনে হবে না। বরং মনে হয় যেন একটা বাড়িতে বন্ধুর মতোই ভাড়া থাকেন তাঁরা। নিজস্ব ফার্ম হাউজ রয়েছে জেলের মধ্যে। সেখানেই কাজ করেন কয়েদিরা। তবে অবসর সময়ে রৌদ্র স্নান থেকে শুরু করে টেনিস খেলা, মাছ ধরা, ঘোড়ায় চড়া— পছন্দ মতো সমস্ত কাজই করতে পারেন বন্দিরা।