ডিএমপি নিউজঃ মহান স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও মহান বিজয় দিবসের ক্রান্তিলগ্নে আইকনিক বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করে ডিএমপি।
আজ ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ (শনিবার) বেলা ১১:০০ টায় পূণ্যভূমি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পুলিশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোট ৫৯ জন বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। আগত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে কয়েকজন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের দুঃসাহসিক অভিযানের বর্ণনাসহ বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। এই সময়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের নিহত সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম(বার) বলেন, “আমি একটাই গর্ববোধ করি যে আমার অগ্রজরা রাজারবাগের এই পূণ্যভূমি থেকে প্রথম প্রতিরোধ বুলেটটি ছুঁড়েছিলো। তাঁরা আত্মত্যাগ করেছিলেন বলেই আজ আমি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার”।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “যখন দেশে যুদ্ধ চলছিলো, তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আমরা শুনতে পাই খানেরা আক্রমণ করেছে, তখন আমরা সকলে সেখানে দৌঁড়ে যাই। দেখি জনগণ তাদের দা, শাবল, কুড়াল, বাঁশ, লাঠি-সোটা নিয়ে তাড়া করে বেল গাছে উঠিয়েছে। এরপর তারা গাছ থেকেই অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে”।
এরপর কমিশনার চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্সে ১৭ জন পুলিশ সদস্যের একসাথে আত্মত্যাগের স্মৃতি চারণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টরকে নির্মমভাবে হত্যার লোমহর্ষক চিত্র তুলে ধরেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এই ক্ষুদ্র আয়োজনে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণ সাড়া দেওয়ায় তিনি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ও শ্রদ্ধা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার সকলের সুস্থতা কামনা করে বলেন, “ আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনারা দেশের জন্য কাজ করেছেন, আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন এদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারি”।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আগত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ডিএমপি কমিশনার।
এরপর স্বাগত বক্তব্যে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার(প্রশাসন) মীর রেজাউল আলম, বিপিএম(বার) মহান বিজয় দিবসের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আপনারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলে আমরা গর্বিত। আপনারা রাজারবাগ পূণ্যভূমিতে এসেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের আত্মত্যাগ, আমাদেরকে করবে অনুপ্রাণিত, করবে উজ্জীবিত”।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান ও মহান নেতার মহানুভবতার স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা তাঁদের অনুভূতি তুলে ধলেন। স্মৃতিচারণ করেন বীরত্বগাঁথা আত্মকহনের।
বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দীন আহাম্মদ বীর বিক্রম (অব: পুলিশ সুপার) বলেন, “১৯৭১ সালে ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, আন্দোলনের অগ্নিশিখা যখন দাও দাও করে জ্বলছে, তখন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদেরকে একত্রিত করেছিলো। আমি তখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে ঝিনাইদহ চলে যাই। সেখানে সকলকে একত্রিত করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি”।
এরপর তিনি এসএলটি ব্যাটালিয়ন (স্বয়ংক্রিয় হাতিয়ার সম্বলিত কন্টিজেন্ট) এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারগণ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার নতুন প্রজম্মের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।