বাংলাদেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এই হাওরের আয়তন ২০,৪০০ হেক্টর। ২৩৬টি বিল নিয়ে এই হাকালুকি হাওর। বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওরের দৃশ্য দেখা যায় ভিন্নরুপে। চারদিকে শুধু পানি আর পানির খেলা। সে এক অপরুপ দৃশ্য। তবে শীতকালে হাওর সাজে এক অপরুপ সাজে। এ সময় অতিথি পাখিরা সারি বেঁধে পাশবর্তী দেশ থেকে আসতে থাকে বিলগুলোতে। এইসব পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওর যেন পরিণত হয় স্বর্গোদ্যানে। আর এ সময় অতিথি পাখিদের মতো মানুষের কলকাকলিও কোনো অংশে কম নয়।
শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিদের প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর পাখি হাওর এলাকায় ভ্রমণে আসে। তাদের সাথে যোগ দেয় আমাদের দেশের প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি। হাওরে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে রয়েছে রাজসরালী, গরাদমাথা রাজহাঁস, চখাচখী, ধলাবেলে হাঁস, গাডোয়াল, ইউরেসীয় সিথীহাঁস, টিকীহাঁস, পাতিহাঁস প্রভৃতি আরও অসংখ্য প্রজাতির হাঁস। দেশি প্রজাতির হাঁসের মধ্যে রয়েছে বেগুনি কালেম, পানমুরসী, পাতিকুট, ডাহুক, ইউরেসীয় মুরগী চ্যাগা, রাঙ্গাচ্যাগা, জলাপিপি, ময়ূরলেজা পিপি, পাতি জিরিয়া, হাট্টিটি, ভূবনচিল, শঙ্খচিল, কুড়াল ঈগল, বড়খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, খয়রা বক, সাদা বক প্রভৃতি অসংখ্য পাখি। এছাড়া, হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার মধ্যে রয়েছে, আইড়, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈসহ আরও নানা প্রজাতির।
শীতকালে হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সেরা সময়। কারণ এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী পাখিদের পাশাপাশি মানুষেরও ঢল নামে। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসটাই হাওর ভ্রমণের সেরা সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। জলজ উদ্ভিদ আর মাছ প্রেমীদের জন্যও এ সময়টা সেরা। এ সময়ে এই হাওর থেকে প্রচুর মাছও ধরা হয়। তাই এ সময় এখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
হাকালুকি হাওরে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে যে কেউ অতি সহজে বাসে অথবা ট্রেনে কুলাউরা শহরে, তারপর রিকশাযোগে হাওরের নিকটে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কুলাউরায় ট্রেনে যেতে খরচ জনপ্রতি শ্রেণিভেদে ১৩০ থেকে ৪৫০ টাকা। আর বাসে গেলে পাওয়া যায় এসি বাস নেপচুন, শ্যামলী পরিবহন, ভাড়া যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তারপর কুলাউড়া শহর থেকে অটোরিকশাযোগে ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
হাওর এলাকায় থাকার জন্য রয়েছে ইজারাদারদের তৈরি করা দোচালা কুটিরগুলো যেখানে কমপক্ষে পাঁচ জন থাকা যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মালিকের অনুমতি নিতে হবে। তবে এর চেয়ে আরও ভাল হবে তাবু টানিয়ে থাকলে। কেননা রাতের বেলায় হাওর এলাকা থেকে জোছনা দেখার মজাই অন্যরকম।