মানুষের কোন সমস্যা বিশেষ করে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য মানুষ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে। মানুষ বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজের প্রশ্নের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। জৈব পরীক্ষার জন্য জীবিত প্রাণী প্রয়োজন হয়। আর এই পরীক্ষার আশানুরূপ ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে কাজ করতে পারে এমন কোন জীবন্ত প্রাণীকেই পছন্দ করা হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেন ইঁদুরকেই পছন্দ করা হয়? তাহলে জেনে নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেন ইঁদুরকেই ব্যবহার করা হয়-
১। যৌক্তিক কারণঃ ইঁদুর ছোট প্রাণী। এদেরকে খুব সহজেই পরিচালনা ও পরিবহণ করা যায় এবং পরীক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় প্রাণীটিকে বিভিন্ন প্রকার অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে চাপ দেয়া হয় যা হতে পারে অনেক বেশি বিরক্তিকর বা উত্তেজক।
২। অপরিসীম প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্নঃ ইঁদুরের উৎপাদন ক্ষমতা দুর্দান্ত। অন্য প্রাণীদের তুলনায় এরা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা খুব কম সময় বেঁচে থাকে। এজন্য খুব কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জেনারেশনে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
৩। মানুষের সাথে মিল আছেঃ মানুষের সাথে ইঁদুরের বৈশিষ্ট্যের লক্ষণীয় মিল পাওয়া যায় বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ইঁদুরের ৯০% জিন আশ্চর্যজনক ভাবেই মানুষের সাথে মিলে যায়। একারণেই মানুষের বিভিন্ন প্রকার জিনের মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির পরীক্ষার জন্য মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে ইঁদুর। এছাড়াও মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথেও ইঁদুরের অঙ্গের বা তন্ত্রের মিল পাওয়া যায়। এজন্যই মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার ঔষধের প্রভাব নির্ণয় করা যায়।
আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এরা জিনগত ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এদের নির্দিষ্ট জিনকে বন্ধ করে বা খুলে রাখা যায় এবং এর ফলে কি পরিবর্তন হয় তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিপরীত জিন সম্বলিত এই প্রকার ইঁদুরকে ‘নকআউট ইঁদুর’ বলা হয়। কিভাবে নির্দিষ্ট জিন নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী তা নির্ণয়ে এই প্রকার ইঁদুর ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। আরেক ধরণের ইঁদুর আছে যাদের ট্রান্সজেনিক ইঁদুর বলা হয়। বাহির থেকে DNA এদের শরীরে প্রবেশ করানোর পরে প্রজনন করানো হয়। মানুষের যন্ত্রণাদায়ক রোগের ম্যাপিং মডেল তৈরিতে সাহায্য করে এই ইদুর।