ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর ভাটারায় জুনের শেষের দিকে ঘটে যাওয়া সাইফুল হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গুলশান জোনাল টিম। সেই সাথে এই হত্যাকান্ডের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ আপেল আহমেদ (২৭), মোছাঃ শান্তা ইসলাম ওরফে আলভী (২০) ও আব্দুর রাকিব চৌধুরী (২২)। রবিবার (১২ জুলাই) বিকাল ০৩.৩৫ টায় ভাটারা থানার বাঁশতলা এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদের দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।
সাইফুল হত্যাকান্ড সম্পর্কে গোয়েন্দা গুলশান জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোঃ গোলাম সাকলায়েন, পিপিএম ডিএমপি নিউজকে বলেন, ২৪ জুন ২০২০ তারিখ ভিকটিম সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা পারভীন তার স্বামী নিখোঁজ সংক্রান্তে হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন। তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন যে, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম দুপুর অনুমানিক ২ টার দিকে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেন নাই। উক্ত জিডি ও গাড়ীর সূত্র ধরে ২৬ জুন ভাটারা থানা পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় ভাটারা থানার মাদানী এভিনিউস্থ ১০০ ফিট থেকে উক্ত গাড়ীটি উদ্ধার করে। গাড়ি উদ্ধারের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন ভাটারা থানার সাঈদ নগর পূর্ব পাড়া মসজিদ গলির আনোয়ার হোসেন এর বাসার ২য় তলা থেকে সাইফুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা ডিএমপি নিউজকে আরো বলেন, উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়টি থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের এর গুলশান জোনাল টিমও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলাকালীন তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। আসামীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রবিবার বিকাল ০৩.৩৫ টার দিকে ভাটারা থানার বাঁশতলা ক্যাম্বব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ এর সম্মুখস্থ বাসষ্ট্যান্ড এলাকা হতে ০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে এডিসি মোঃ গোলাম সাকলায়েন বলেন, গ্রেফতারকৃত মোঃ আপেল আহমেদের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। সে ফুটপাতে কখনও ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করে, কখনও ভাসমান রেস্টুরেন্ট, কখনও ফলমূল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। করোনার কারনে আয়ের পথ বন্ধ হলে সে আর্থিক সংকটে পড়ে। ভিকটিম সাইফুলের কাছে টাকা পেত আপেলের বন্ধু রাফি। রাফি’র পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য রাফির সাথে পরিকল্পনা করে আপেলর স্ত্রী শান্তা ইসলাম ফোনে অসামাজিক কার্যক্রমের প্রলোভন দেখিয়া সাঈদ নগর তাদের বাসায় সাইফুলকে নিয়ে আটকে রাখে। প্রথমে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে চাকু’র উল্টা দিক দিয়ে মারধর করে এবং টাকা চাইতে থাকে। এদিকে পূর্বেই আপেল স্থানীয় নোমান ও হাসানকে ডেকে এনেছিল। পাশাপাশি আপেল এর দুসর্ম্পকীয় ফুফাতো ভাই রাকিব কেও ডেকে এনেছিল ঘটনাস্থলে। একপর্যায়ে নোমান ও হাসান চলে যায়। কোন এক সুযোগে ভিকটিম পালানোর চেষ্টাকালে রাকিব প্রথমে টেনে ধরে এবং আপেল উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ভিকটিম সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে। এ সময় আপেল এর স্ত্রী সাইফুলের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। পরবর্তীতে সাইফুলের মুখে ওড়না গুজে দিয়ে গলা কাটে। নিহত সাইফুল স্বাস্থ্যবান ও লম্বা হওয়ায় তার লাশটিকে গুম করতে না পেরে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।