বাঘ ধরতে পাতা হয়েছিল খাঁচা। কিছুটা দূরে রাতভর দাঁড়িয়ে বন দফতরের গাড়ি। ভোরে সেই গাড়িতেই মিলল দুই বনকর্মীর দেহ। শরীরে আঘাতের চিহ্নমাত্র নেই। যেন ঘুমের মধ্যে নেমে এসেছে চিরঘুম!
মঙ্গলবার দেশটির পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে নয়াবসত রেঞ্জের হামারগেড়্যা জঙ্গলের এই ঘটনায় আরও জটিল হল রয়েল বেঙ্গল রহস্য। বাঘের দেখা নেই, অথচ তাকে ধরতে গিয়ে মরতে হল দু’জনকে। ভয়ই যেন কেড়ে নিল দু’টি প্রাণ। মৃত দামোদর মুর্মু (৩৮) ছিলেন ফরেস্ট গার্ড, আর অমল চক্রবর্তী (২৮) বন দফতরের বিশেষ ওই গাড়ি ‘ঐরাবতে’র চালক।
পুলিশ ও বন দফতর সূত্রের খবর, সোমবার রাত তিনটে পর্যন্ত অমল ও দামোদর বন সুরক্ষা কমিটির পাহারাদারদের সঙ্গে গাড়ির বাইরে ছিলেন। সোয়া তিনটে নাগাদ ঘুমোবেন বলে গাড়িতে ওঠেন। বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা জানাচ্ছেন, গাড়ির সব দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন দু’জনে। ভেতরে জেনারেটর চলছে। গাড়ির সামনে-পিছনে আলো জ্বালাতেই চলছিল জেনারেটর। অনুমান, ডিজেলের ধোঁয়ার কার্বন ডাই অক্সাইডে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।
মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা নাগাদ বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা দেখেন, আকাশ ফর্সা হলেও ‘ঐরাবতে’র আলো নেভেনি। গাড়ির কাছে গিয়ে ডাকাডাকিতেও সাড়া না মেলায় খবর দেওয়া হয় বনকর্তাদের। শাবল এনে দরজা ভাঙতেই সকলে অবাক— ভেতরে ধোঁয়া, গাড়ির আসনে আর মেঝেতে পড়ে দামোদর ও অমলের দেহ। পুলিশ এসে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠায়।
যে অবস্থায় দেহ দু’টি ছিল, তাতে পুলিশেরও ধারণা, দামোদর ঘুমের মধ্যে মারা যান। আর অমল ছাদের এমার্জেন্সি জানলা লাঠি দিয়ে খোলার চেষ্টা করলেও পারেননি।
হামারগেড়্যার অদূরে কাদরার জঙ্গলে গত রবিবার এক ব্যক্তিকে বাঘে কামড়ানোর দাবি ওঠে। সোমবার বিকালে কাছেই মহারাজপুরের জঙ্গলে খাঁচা পাতা হয়, ওড়ে ড্রোন। বাঘের হদিস মেলেনি। তবে তার ভয়েই বেঘোরে মরতে হল দু’জনকে।-আনন্দবাজার