গো-মূত্র বা গোবর আগেই মিলছিল, এ বার অনলাইনে মিলছে গরু-বাছুরও।
গত ২৩ মে একটি নির্দেশিকা জারি করে মোদী সরকার। সেখানে বলা হয়, হত্যার উদ্দেশ্যে গবাদি পশু কেনাবেচা করা যাবে না। গবাদি পশু নির্যাতন রুখতে কেন্দ্র যে নতুন বিধির কথা বলেছে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট মঙ্গলবার তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করেই অনলাইনে জমিয়ে বসেছে গবাদি পশুর বাজার। তাতে ক্রেতা বা বিক্রেতাদের তরফেও ভালই সাড়া মিলছে।
লখনউয়ের গরু বিক্রেতা প্রকাশ মিশ্র। অনলাইনে কেনাবেচার একটি ওয়েবসাইটে তাঁর পোস্ট করা বিজ্ঞাপনে মাত্র ২৫ হাজার টাকায় মিলছে ‘কম্বো অফার’— একটি গরুর সঙ্গে একটি বাছুর। খয়েরি রঙের একটি গরুর সঙ্গে সাদা-কালোয় মেশানো তার বাছুরের ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে প্রকাশের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরও দেওয়া রয়েছে।
দিন দুয়েক আগে এ রকম আর একটি বিজ্ঞাপনও দেখা গিয়েছে অনলাইনে কেনাবেচার ওয়েবসাইট ওএলএক্স-এ। সেখানে মাত্র ১২ হাজার টাকায় পূর্ণবয়স্ক একটি গরু বিক্রির কথা জানিয়েছেন এস এম সিংহ। শুধুমাত্র ছবি নয়, গরুদের গুণগানও করা হয়েছে কোনও কোনও বিজ্ঞাপনে। গবাদি পশুর মালিক দিল্লির অঙ্কুর সহদেব যেমন জানিয়েছেন, দিনে ১৬-১৮ লিটার দুধ দেয় তাঁর গরু। ৪৮ হাজার টাকায় তা বিক্রি করতে চান তিনি। অনলাইনে তার সবিস্তার বিবরণও দিয়েছেন অঙ্কুর। সঙ্গে হোম ডেলিভারিরও প্রস্তাবও রয়েছে তাঁর বিজ্ঞাপনে।
বস্তুত, গো-রক্ষকদের ভয়েই অনলাইনে কেনাবেচা শুরু হয়েছে গরু-বাছুরের। মাউসের এক ক্লিকেই তা পৌঁছবে ক্রেতার বাড়ির দোরগোড়ায়। প্রয়োজন শুধু একটি ফোনকলের। এ নিয়ে কটাক্ষও শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ভার্চুয়াল জগতের এই পসরা আসলে নরেন্দ্র মোদীর ডিজিটাল ভারতের স্বপ্নে জোয়ার এসেছে। পরোক্ষ ভাবে হলেও তা আবার গো-রক্ষকদের সৌজন্যেই। কেননা, বাস্তবের মাটিতে সেই সমস্ত গো-ভক্তের দল তাণ্ডব না করলে ভার্চুয়াল জগতে বোধহয় এই পসরা সাজিয়ে বসতেন না বিক্রেতারা।
গত কয়েক মাসেই গো-রক্ষকদের দৌরাত্ম্যের একাধিক নমুনা দেখা গিয়েছে দেশটির নানা প্রান্তে। সেই সব স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই মেলেনি কাশ্মীরের এক ন’বছরের নাবালিকাও। গরু কেনাবেচা বা গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর-হুমকি-হামলা থেকে শুরু করে খুন-গণধর্ষণেরও মতো খবরও উঠে এসেছে শিরোনামে। তবে গো-রক্ষকদের হাত বোধহয় এখনও ভার্চুয়াল জগতে পৌঁছয়নি। তাই ওএলএক্স বা কুইকারের মতো অনলাইন শপিং সাইটে বিক্রির জন্য সাজানো হয়েছে পছন্দের গরু-বাছুর।
তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অমান্য করে ভার্চুয়াল জগতে গবাদি পশু কেনাবেচা করলে কী শাস্তি হতে পারে? সে প্রশ্নের এখনও কোনও উত্তর মেলেনি।