বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্কালে বাংলাদেশে ভিয়েতনামের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ট্রান ভান খোয়া বলেন ভিয়েতনাম থেকে চালের প্রথম চালান আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
সরকারি গুদামের মজুদ কমে আসায় বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে ৯০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ১৪ জুন দরপত্র ছাড়াই সরকারি পর্যায়ে এই চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
ভিয়েতনাম থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৪৭০ মার্কিন ডলার দরে ৫০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল কিনতে খরচ হবে ১৯৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এছাড়া ৪৩০ মার্কিন ডলার দরে দুই লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানিতে ৭১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ হবে। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ভিনাফুড টু এই চালের ৬০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এবং বাকি ৪০ শতাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে সরবরাহ করবে। সর্বশেষ ২০১১-১২ সালে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করেছিল সরকার। তবে ধান উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় এরপর বেশ কয়েক বছর আর সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করতে হয়নি।
চাল আমদানীর বিষয়ে সাক্ষাত্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামেরও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হওয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের পর ভিয়েতনাম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। দেশটি আমাদের জন্য এক উদাহরণ এবং আমরা তা অনুসরণ করছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য ভিয়েতনামের মতো আমাদেরকেও যুদ্ধ করতে হয়েছে। যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। এ সময় তিনি ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম বাণিজ্য ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। দারিদ্র্যকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই অভিশাপ নির্মূলে সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হবে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চেষ্টার প্রশংসা করে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে এবং একে অপরের কাছ থেকে শেখার আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ভিয়েতনামের বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের জীবনভিত্তিক একটি বই প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করে বলেন, উভয় দেশই উভয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দিয়েছে।