ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের কিছু নেই। ভ্যাট দিতে হবে রাষ্ট্রের জন্য। উন্নত রাষ্ট্রে ভ্যাটের পরিমাণ ২০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে ভ্যাটের হার খুব বেশি না, তবে প্রয়োজনে সংশোধন হতে পারে ভ্যাটের এ হার। সোমবার রাজধানীর রমনা রেস্টুরেন্টে ‘সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ বিষয়ে সচেতনা বিষয়ক এক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন ঢাকা পূর্ব কাস্টম এক্সাইট ভ্যাট কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান।
কাস্টম এক্সাইট কমিশনারেট রূপগঞ্জ ও সূত্রাপুর ডিভিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপগঞ্জ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার সাদিয়া আফরোজ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর, ইলেক্ট্রিক মার্চেন্ডাইজিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব জাবেদ, কাস্টম কমিশনারেট পূর্ব’র ডেপুটি কমিশনার তাছমিনা হোসেন প্রমুখ।
ড. একেএম নুরুজ্জামান বলেন, ভ্যাট দিলে এই সুবিধা সবাই পাবে। একজন ব্যক্তি ভ্যাট দিবে দেশ গঠনের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। আমরা সচ্ছ, সুন্দর কর ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের মধ্যম আয় ও উন্নত রাষ্ট্রে যেতে হলে রাজস্ব ভান্ডারে রাজস্ব বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট আইনে রাখা হয়েছে এক গুচ্ছ সুবিধা। এখানে সবাই ১৫ শতাংশ কর দেবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য রয়েছে সুবিধা, ভ্যাট আইনে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার রাখা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২বার্ষিক টার্ণওভার ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স প্রদান করলেই হবে। অনাবাসিক ব্যাক্তির জন্য থাকছে মূষক এজেন্ট সুবিধা। উপকরন কর রেয়াতের পরিধি নতুন আইনে অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের দেখতে হবে কিভাবে এই ভ্যাটের হার কমানো যায়। দেশের প্রতিটি ব্যবসায়ী ভ্যাট দিতে চায়, তবে ভ্যাটের হার কমাতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাটের হার অনেক কম আমাদের দেশে সেখানে অনেক বেশি। আমরা সিঙ্গেল ডিজিটের ভ্যাট চায়। তিনি বলেন, সিঙ্গেল ডিজিটের ভ্যাট হলে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সংখ্যা কমবে, ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে উৎসাহিত হবে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ভ্যাটকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের সর্বস্তরে ভ্যাটের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এর পাশাপাশি ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা দরকার। আমাদের বুঝতে হবে ভ্যাট সরকারের জন্য নয়, ভ্যাট সবার জন্য, সবার সুবিধার্থে।
সভাপতির বক্তব্যে ডেপুটি কমিশনার সাদিয়া আফরোজ বলেন, নতুন ভ্যাট ব্যবস্থায় ভ্যাটের হার বহুগুনে বেড়েছে। করদাতাদের বিশ্বাস বেড়েছে। অনলাইন করায় ব্যক্তি নিজেই নিজের ভ্যাট সমন্ধে জানাতে পারে। প্রয়োজনে সংশোধন বা হেল্প ডেস্কে কথা বলে সংশোধন করতে পারে। রিটার্ণ জমা দিতে পারবেন ঘরে বসে। তিনি বলেন, আগেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল এখনও আছে এই হার। এখন ব্যবসায়ীদের জন্য আরও সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তাদের সুবিধার্তেই এই কর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে থেকে ১৮ মে ঢাকার চারটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ) ও রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটে ভ্যাট মেলার আয়োজন করা হয়। ১৮ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত রাজশাহী, যশোর, খুলনা এবং ২১ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কুমিলা, সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।