ডিএমপি নিউজঃ শিক্ষার্থীদের মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকার আহবান জানালেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
আজ সোমবার (১৫ মার্চ, ২০২১) সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়াম,রাজারবাগ,ঢাকায় কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে পুলিশের কৃতি সন্তানদের এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোঃ মাহবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম । অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী বিপিএম(বার), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) কৃষ্ণ পদ রায় বিপিএম(বার), পিপিএম(বার), নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম (বার)। কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আফরোজা পারভীন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃতি শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং তাদের পিতা-মাতা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, ছাত্র জীবনে জঙ্গিবাদ থেকে সর্বদা দুরে থাকবে। জঙ্গিবাদ ইসলামের শত্রু। এই জঙ্গিদের হাতেই মুসলমানদের রক্ত ঝরেছে সবচেয়ে বেশি। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রচুর ধর্মীয় বই রয়েছে। তোমরা ধর্মীয় বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা , ধর্মীয় চর্চা, রীতিনীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধরে রাখবে। তোমাদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধে শিক্ষিত ও সচেতন হতে হবে।
আইজিপি বলেন, ড্রাগ সমস্ত সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়। তোমাদেরকে ড্রাগ থেকে দূরে থাকতে হবে। দেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। নিজের আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান থাকতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান থাকতে হবে।
নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে জাতির ভবিষ্যৎ আখ্যায়িত করে পুলিশ প্রধান বলেন, বাঙালি জাতি মেধায় অনন্য, মননে অগ্রগামী। এর প্রমাণ হলো, এ পর্যন্ত এ উপমহাদেশে চারটি নোবেল এসেছে। এর মধ্যে তিনজনই বাঙালি। এতে বোঝা যায়, মেধা, মনন ও সৃষ্টিশীলতায় বাঙালিরা অনন্য। এদেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে তোমরা হবে আলোকবর্তিকা।
যৌথ পরিবারের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। যৌথ পরিবারে থাকলে শিশুরা দাদা-দাদী,নানা-নানীসহ পরিবারে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শ পেতো, তাদের সাহচর্য পেত। এতে শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি অনেক মজবুত হতো। কিন্তু বর্তমানে একক পরিবারে এ সুযোগ আর নেই। আমরা চাই আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্য মানবতার গুনাবলীতে বেড়ে উঠুক।
পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, সন্তানদেরকে সময় দিতে হবে। তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা বুঝতে হবে। তাদেরকে কাউন্সেলিং করতে হবে। তারা যেন সাইবার ওয়ার্ল্ডে অপরাধের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আর কয়েকদিন পর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। এ উপলক্ষে জাতীয়ভাবে আগামী ১৭-২৬ মার্চ পর্যন্ত দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ জন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের সম্মানীয় অতিথি হয়ে ঢাকায় আসবেন, তাঁরা এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তাঁদের নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। যাঁরা আসবেন তাঁরা আমাদের সম্মানিত মেহমান। এ সময়ে তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশকে সহযোগিতা করাসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনগণের চলাচল সীমিত রাখার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রীয় সম্মানিত অতিথিগণের চলাচল ও নিরাপত্তা যেনো ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে এ সময়ের মধ্যে কোনো সভা, সমাবেশ ও কর্মসূচী না দিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অনুরোধ জানান আইজিপি।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী বিপিএম (বার) বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার পর আমরা একটি ভাগ্যহারা জাতি হিসেবে পরিণত হয়েছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। জাতির পিতাকে অস্বীকার করা মানে জাতিসত্তাকে অস্বীকার করা।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অতিরিক্ত আইজি আরও বলেন, ‘তোমাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। সত্যকে জানতে হবে, সত্যকে বুঝতে হবে।
আজকের অনুষ্ঠানের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাকে অভিনন্দন জানিয়ে ডিআইজি মোঃ মাহবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী বাবাকে ছাড়া তাদের মায়ের আদরে লেখাপড়া করেছে। আজকের দিনটি কৃতি শিক্ষার্থীদের জন্য স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) কৃষ্ণ পদ রায় বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন এর উদ্যোগে পুলিশের জন্য নানাবিধ কল্যানমূলক কর্মকান্ড গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ফাউন্ডেশন কর্তৃক কৃতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে আমাদের পুলিশের সন্তানরা শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বাক্ষর রাখবে এবং নির্বিঘ্নে পড়া -লেখা করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন কার্যনির্বাহী কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ফাউন্ডেশন ২০১৮ সাল হতে সর্ব প্রথম ক্যাডার ভিত্তিক সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির ধারা প্রর্বতন করেনর। শিক্ষাবৃত্তি ২০১৮ এর নিতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯ জনকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগড়িতে ১০০ জনকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
মোট চারটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশ পরিবারের ১২৪ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তি ২০২০ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে পিইসি/সমমান ৪৬ জন, জেএসসি/সমমান ২৪ জন, এসএসসি/সমমান ৫০ জন ও উচ্চ শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করার জন্য ৪ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ফাউন্ডেশন নামের একটি ফাউন্ডেশন চালু করে। ফাউন্ডেশনটি চালুর পর থেকে প্রতি বছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে আসছে।
এ অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকেট ও বৃত্তির অর্থ তুলে দেন।