ডিএমপি নিউজ :‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা- মিরপুর বিভাগ।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
বুধবার রাতে ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, মিল্টন সমাদ্দারকে সুর্নিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ‘ভয়ংকর’। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। যদি তিনি এগুলো করে থাকেন, তবে ভয়ংকর অপরাধ করেছেন। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি আরো বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ উঠেছে। তার প্রতিষ্ঠিত আশ্রয়কেন্দ্রে অসহায় শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আসতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তিনি স্বীকার করেছেন, তার আশ্রয়কেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার আছে। যদি অপারেশন থিয়েটার থাকে বা হাসপাতাল থাকে, সেটির লাইসেন্স থাকতে হয়। কিন্তু তিনি এ–সংক্রান্ত কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, মিল্টন সমাদ্দার আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বেশির ভাগ লাশ রাতে দাফন করতেন। ‘তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাতে লাশ দাফন করেন কেন? তিনি জবাব দিয়েছেন, রাতে লাশ দাফন না করলে মানুষ আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে।’
তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দার লাশ দাফনের যে হিসাব দিয়েছেন, সেখানেও গরমিল আছে। ‘আমরা এটাও জেনেছি, ইতিমধ্যে তিনি ৯০০ লাশ দাফন করেছেন। কিন্তু ৮৩৫টি লাশের হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। এসব লাশ দাফনের কোনো ডকুমেন্ট তার কাছে নেই। তিনি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, নিজেই মৃত্যু সনদ তৈরি করে চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল জাল করতেন। তার আশ্রমের পাশে একটা মসজিদ আছে, সেখান থেকেও প্রশ্ন উঠেছে, লাশের শরীরে কিডনির পাশে রক্তের দাগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
মিল্টন সমাদ্দারের দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তার একটি আশ্রয়কেন্দ্র মিরপুরে এবং অন্যটি সাভারে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০ থেকে ৭০০ লোক রয়েছে। কিন্তু সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০–৩০ বা ৪০ জনের বেশি নেই। আমাদের কথা হলো, আমরা তাকে নিয়ে এসেছি। কিছু অভিযোগকারী রয়েছে, তারা মামলা করবেন। আমরা তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব, কত সংখ্যক মানুষ তার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে কত সংখ্যক মানুষ মারা গেলেন। তিনি যেখানে অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করেছেন, সেখান থেকে কিডনি বিক্রি করেছেন কি না, সেই অভিযোগটিও তদন্ত করা হবে।’
মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিল্টনের উত্থান হচ্ছে বাবাকে পেটানোর পর এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। তারপর শাহবাগে এসে একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন। সেখানে ওষুধ চুরির কারণে তাকে বের করে দেওয়া হয়। একটা পর্যায়ে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন।’
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) জানান, গ্রেফতারকৃত মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় ৩টি মামলা রুজু হয়েছে। আজ রিমান্ড চেয়ে তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।