ডিএমপি নিউজঃ সারা দেশে সড়কের শৃংখলা ফেরাতে বাংলাদেশ পুলিশ এর পক্ষ থেকে নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঈদের আগে দেশ ব্যাপী ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ পালিত হয়েছে। চলমান ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানকে আরো বেগবান করার জন্য মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৮ পুরো মাস এই ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট থেকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চালু হচ্ছে মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা। যেখানে গাড়ি চলবে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির ভিত্তিতে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আজ সকাল ১১টায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগরীতে মাসব্যাপী ট্রাফিক কর্মসূচির ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
সড়কের শৃংখলা ফেরাতে মাসব্যাপী কর্মসূচি সম্পর্কে কমিশনার বলেন, সকলকে নিয়ে সড়কের শৃংখলা ফেরাতে আমরা চেষ্টা করছি। সড়কের এই সমস্যা একদিনের নয়, এটা বহু দিন থেকে চলে আসছে। বহুদিন চলতে থাকায় সড়কের অনিয়ম যেন নিয়মে রূপ নিয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন না মানার প্রবনতা। আইন না মানলে ট্রাফিক শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট হতে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মাসব্যাপী ( ০৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু হবে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। এক মাসব্যাপী চলমান ট্রাফিক কর্মসূচিতে প্রতিটি পালায় পুলিশের সাথে ৩২২ জন রোভার স্কাউটের সদস্য কাজ করবে। ট্রাফিক শৃংখলা, দুর্ঘটনা হ্রাস ও ঢাকা মহানগরীকে যানজট মুক্ত রাখার লক্ষ্যে আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
এছাড়াও ট্রাফিক কর্মসূচির মধ্যে যেসমস্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেসব উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, মোটর সাইকেল আরোহী ও চালক উভয়কে হেলমেট বাধ্যতামূলক পড়তে হবে। কোন অবস্থায় মোটর সাইকেলে তিনজন চড়া যাবে না। পেট্রোল পাম্পগুলোকে বলা হয়েছে হেলমেট ছাড়া কোন মোটর সাইকেলে জ্বালানি তৈল না দিতে। ঢাকা মহানগরীতে ১২১টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্ধারিত বাস স্টপেজ ব্যতীত অন্য কোথাও বাস দাড়াবে না এবং যাত্রী উঠা-নামা করাবে না। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ পর্যন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকবে। স্টপেজ ব্যতীত বাসের দরজা খোলা যাবে না। স্টপেজগুলো জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রীজ থেকে একটু দুরে করা হবে। ৪০ টি চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি চেক করবে।
গাড়ির মালিক ও চালকদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, চালকেরা গাড়িতে নিজের মোবাইল নম্বর ও ছবি প্রকাশ্য স্থানে লাগিয়ে রাখবেন। গাড়ি চালানো পূর্বে অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখবেন। গাড়ির মালিকেরা গাড়িতে সমস্ত কাগজপত্র আপডেট রাখবেন। কোন অবস্থায় ফিটনেস বিহীন ও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। গাড়ির চালকরা বেতনভুক্ত হবে। কোন অবস্থায় চালকদের চুক্তিভিত্তিক গাড়ি দেয়া যাবে না। যে গাড়ির মালিক এই নিয়ম অমান্য করবেন বিআরটিএ থেকে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না।
পথচারী ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, পথচারীরা কোন অবস্থায় যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হবেন না। রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রীজ ও আন্ডারপাশ ব্যবহার করুন। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে। কম বয়সী শিক্ষার্থীরা রাস্তা পারাপারের সময় সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সাহায্য নিয়ে নির্ধারিত স্থান দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। সকলকে ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানান ডিএমপি কমিশনার।
যে সমস্ত গাড়ির চালক ও মালিক ট্রাফিক আইন মানছেন না তাদের উদ্দেশ্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য যারা গাড়িতে ফ্লাগ স্ট্যান্ড লাগিয়েছেন। যা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না। তারা দ্রুত এসব অবৈধ ফ্লাগ স্ট্যান্ড গাড়ি থেকে খুলে ফেলুন। এছাড়া যারা গাড়িতে বিকন লাইট, হুটার ও হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করছেন তারাও দ্রুত এগুলো খুলে ফেলুন। অন্যথায় আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
এ সময় কমিশনার বিগত ট্রাফিক সপ্তাহ ও এক বছরে ট্রাফিক অভিযানের ফলাফল সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। যার মধ্যে বিগত দেড় বছরে (২০১৭-২০১৮) ট্রাফিক বিশেষ অভিযানে ট্রাফিক সংক্রান্তে মোট মামলা হয়েছে ৬,২৫,৯৪৫ টি, ভিডিও মামলা- ৯৮৮৪৩ টি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জায়গায় ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি (২০১৭-২০১৮) – ৩৬৩৯ টি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেয়া বন্ধ করতে ডিএমপি’র নিজস্ব অর্থায়নে ফুটপাতে ৪০৭৭টি মেটাল পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ দিনের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে উল্টোপথে চলাচল, হুটার/বিকন লাইট, হাইড্রলিক হর্ণ, মোটরসাইকেল, স্টিকার ব্যবহারসহ ট্রাফিক আইন ভঙ্গের নানান অভিযোগে সর্বমোট ৮৮,২৯৩ টি মামলায় ৫,৬৭,১৫,০৩০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সকলের সচেতনতাই পারে নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে। সকলের দায়িত্বশীল আচরণ, সচেতনতা ও ট্রাফিক আইন প্রয়োগে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান কমিশনার।