মাঝে কয়েকদিন শীতের প্রকোপ কিছুটা বাড়তির দিকে থাকলেও হীমেল ভাব কমতে থাকায় পর্যটকরা দল বেঁধে ছুটে আসছেন প্রকৃতির কাছে। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি ঘেরা রাঙামাটির মোহনীয় সৌন্দর্য সাধারণত শীতল আবহাওয়ায় আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। এটাই বেড়ানোর মোক্ষম সময়।
করোনার প্রভাবে চারমাস বন্ধ থাকায় সবগুলো পর্যটন স্পট নতুন করে সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নবসাজে সজ্জিত ঝকঝকে পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে দারুনভাবে আনন্দিত পর্যটকরাও।
পর্যটকদের কাছে প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিই আদর্শ স্থান। হ্রদ পাহাড় ঘেরা রাঙামাটিতে প্রকৃতির গন্ধ, পাখির কলকাকলী এবং সাগর বেলার পরিবেশ একসাথে বিদ্যমান। পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক -এর কাঠের তাকিয়াগুলোতে শুয়ে বা হেলান দিয়ে ছবি তুললে মনে হয় আপনি কোনো সমুদ্র সৈকতে ছবি তুলেছেন।
সবুজ চাদর পরে দাঁড়িয়ে থাকা নিশ্চল পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা প্রাকৃতিক ছড়া, এঁকে বেঁকে দূর পাহাড়ের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া মেঠোপথ, পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জল, কর্ণফুলীর স্রোত, কাপ্তাই হ্রদের শান্তজলে স্রোতহীন ছোট ছোট ঢেউ। পাহাড়ের কঠিন বুকে ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলা গ্রাম্য নারীর জুম। জুমের বিচিত্র সবজি বাগান আর রবি শস্যে সোনালী দোল। বুনো ফুলের মন মাতানো সৌরভ, অতিথি পাখির কিচির-মিচির ডাক, বানর ডাহুক আর হরিণের দুর্লভ মিতালী এমন বর্ণনাতীত বিচিত্র সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্বত্য রাঙামাটি।
সবুজ-শ্যামল চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত এই অপরূপ রাঙামাটিতে যাদের আসার সুযোগ হয়নি তারা হয়তো দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য কখনই চিত্রিত করতে পারবেন না। লীলাময়ী প্রকৃতি যেন আপন হাতে এ অঞ্চলে তার সৌন্দর্য সুধা ঢেলে দিয়েছেন।
ছবির মতো সবুজে ঘেরা পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল স্থির নীল পানি রাশি রাঙামাটিকে বাংলার সৌন্দর্যের স্বর্গে পরিণত করেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের অপার আঁধার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। রাঙামাটিতে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ওয়াটার বাস এটা পর্যটকদের কাছে বাসতি আকর্ষণ।
এখন রাঙামাটি শহরে পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পরম যত্মে চাষ করা বড়বড় রসালো কমলা। দাম কিছুটা চড়া হলেও কমলা বাজারে ওঠার সাথে সাথেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি মাল্টা, মিষ্টি পেয়ারা, তেঁতুল,আনারস এবং আমলকি। পাহাড়ি নারীদের হাতে বোনা বস্ত্র সম্ভার তো আছেই। এই বস্ত্র সম্ভারে যুক্ত হয়েছে শীতকালীন নানা পোশাক।
সবুজের শেষ প্রান্তে মেঘ বালিকার মিতালি, উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। আর তুলির আঁচড়ের মতো মাঝে মাঝে সবুজের বুক চিরে বয়ে যাওয়া কাচালং নদী আর পাহাড়ি ছড়া। যে কোনো নিরস মনকেও ভাবুক আর উদাস বানিয়ে দেয় কিছুক্ষণের জন্য হলেও। এই শহরের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে সাপছড়ির ফুরোমোন পাহাড়, আর শেষ প্রান্তে ডিসি বাংলো।
জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা পলওয়েল ন্যাচারাল পার্কটি যে কোনো বয়সের নারী পুরুষ কিংবা শিশুদের বেড়াবার জন্য একটি আদর্শ স্থান। সবদিক থেকে নিরাপদও বটে। এই স্থানটির সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য দিক হলো সমুদ্র সৈকতের স্বাদ নেয়ার সুযোগ। এখানে আপনি নিশ্চিন্তে হৃদের জলে পা ভিজিয়ে নিতে পারবেন। পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক এর পাশেই আছে লাভস্পট। বিশ্বের অনেক দেশেই পর্যটন এলাকগুলোতে ভালোবাসার নিদর্শন প্রকাশ করার জন্য এমনি লাভস্পট চিহ্নিত করা আছে। এই পার্কে প্রবেশের জন্য অবশ্য বর্তমানে টিকেট কাটতে হয়। জনপ্রতি ১৫ টাকা।
প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিতে ভ্রমণ করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে সুখী নীলগঞ্জ এবং ফুরমোন অনতম আকর্ষণীয়। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদ, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, সাজেক, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।