১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা প্রয়াত মোহাম্মদ আলী। সম্প্রতি তাকে ক্ষমা করার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য প্রত্যাখান করেছেন মোহাম্মদ আলীর পরিবারের একজন আইনজীবী।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট ‘জি-সেভেন’ এর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে শুক্রবার হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সে সময় মি: ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রয়াত মোহাম্মদ আলীকে ক্ষমা করার কথা ভাবছেন।
মোহাম্মদ আলীকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেয়া হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭১ সালে সেই দণ্ড বাতিল করে দেয়। এই বিষয়টি তুলে ধরে মোহাম্মদ আলীর আইনজীবী রন টুইল একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ক্ষমার আর প্রয়োজন নেই। যেহেতু সুপ্রিমকোর্ট মোহাম্মদ আলীর দণ্ড অনেক আগেই বাতিল করে দিয়েছে, সেখানে দণ্ড না থাকলে এ রকম ক্ষমার আর প্রয়োজন থাকে না। তবে আইনজীবী রন টুইল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে ৩০০০ লোককে ক্ষমা করার কথা বলেছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ৩০০০ লোককে ক্ষমা করার কথা ভাবছেন এবং তাদের মধ্যে মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী রয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এসব ব্যক্তির অনেকের নামের প্রতি সুবিচার করা হয়নি। আমি মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে ভাবছি। আমি তাঁকে এবং অন্যদের বেশ গুরুত্ব দিচ্ছি। এমন কিছু ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, যেটা ন্যায্য ছিল না।’
কিন্তু মোহাম্মদ আলী কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন? কিংবদন্তি এই ক্রীড়াবিদ খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম নিলেও পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তাঁকে ভিয়তেনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তখন মোহাম্মদ আলী তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে ঐ যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
পরের বছরই ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তাঁকে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বিচারিক আদালত তাঁর দশ হাজার ডলার জরিমানা এবং ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। সেই আদেশ বাতিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট। ২০১৬ সালে ৭৪ বছর বয়সে পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ আলী।
এই ঘ্টনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমা করার ক্ষমতার প্রেমে পড়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। অনেকে আবার মনে করছেন, ট্রাম্প তার ক্ষমা করার ক্ষমতা যেভাবে ব্যবহার করার কথা বলছেন, সেটাকে বেশিরভাগ মানুষ বিনোদন হিসেবে নিচ্ছে। কারণ মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু ২ বছর পর তাঁকে ক্ষমা করার মতো উদ্ভট কথা বলছেন ট্রাম্প। এছাড়া মোহাম্মদ আলীর সেই দণ্ডও বহু আগে বাতিল হয়ে গেছে। অন্যদিকে, কয়েকদিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিজেকে ক্ষমা করার ক্ষমতাও তার আছে। এই বক্তব্য নিয়েও নানা আলোচনা চলছে রাজনৈতিক আঙ্গণে। বিবিসি