রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অটোরিকশা চালক জসিম মোল্লা হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় রুজুকৃত মামলায় একজনকে গেন্ডারিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গেন্ডারিয়া ও যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতের নাম রনি ওরফে বেলবাটি রনি ওরফে পিচ্চি রনি (৩৭)।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত ০১:৩০ ঘটিকায় গেন্ডারিয়া থানাধীন ঘুন্টিঘর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা অটোরিকশা চালক জসিম মোল্লা (৪২) গত ০৬ জনুয়ারি ২০২৫ রাত ০৬:৩০ ঘটিকায় তার তার বড় ছেলে বিল্লালকে নিয়ে নিজ বাসা হতে দয়াগঞ্জের উদ্দেশে বের হয়। অতঃপর রাত ০৮:৩০ ঘটিকায় বিল্লাল বাসায় ফিরলেও তার বাবা জসিম ফিরেননি। এসময় বিল্লাল বাসায় থাকা তার মা শিল্পী (৩৮)কে জানায় জসিম দয়াগঞ্জ রেললাইনের পাশে কিছু লোকজনের সাথে কথা বলছিল। পরবর্তীতে জসিমের স্ত্রী শিল্পী রাতে কয়েকবার তার স্বামীর সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোন বারবার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরবর্তীতে ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ রাত অনুমান ০২:৫০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ির মীরহাজিরবাগ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা রোডের ইঞ্জিনিয়ার গলির মাথায় পাঁকা রাস্তার উপর জসিমের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ সময় জসিম মোল্লার মাথায়, পিঠে, বাম হাতের কব্জি, বাম পায়ের গোড়ালি ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। একই সাথে তার এক হাত এবং এক পায়ের রগ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনায় মৃত জসিম মোল্লার স্ত্রী শিল্পীর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ যাত্রাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।
মামলাটির তদন্ত কালে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্যে উক্ত হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রনির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় রনির অবস্থান সনাক্ত করে গেন্ডারিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
থানা সূত্র আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত পিচ্চি রনি উল্লিখিত হত্যার ঘটনায় নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রনির ভাষ্যমতে, চাচাতো ভাই হানিফের সাথে জসিমের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন হানিফ জসিমকে দেখা করতে বললে জসিম তার বাসা থেকে রওনা দেয়। অপরদিকে হানিফ, পিচ্চি রনিসহ ছয়জন মীরহাজিরবাগ ইঞ্জিনিয়ার গলিতে জসিমের আসার অপেক্ষায় থাকে। জসিম উক্ত এলাকায় আসলে হানিফের সাথে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে হানিফ জসিমকে মারধর করা শুরু করে। পরবর্তীতে পিচ্চি রনিসহ অন্যান্য সহযোগীরাও জসিমকে মারধর ও কোপাতে শুরু করে। এসময় তারা জসিমের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এরপর পিচ্চি রনি, হানিফসহ অন্যরা জসিমকে আহত অবস্থায় রেখে চলে যায়।
থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রেফতারকৃত পিচ্চি রনির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে দশটির অধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হত্যায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।