ডিএমপি নিউজ: রমজান মাসে খাবার গ্রহণের দুটি বিশেষ সময় হলো সাহরি ও ইফতার। সারাদিন কষ্ট করে রোজা রাখার পর, ইফতারে মুখরোচক ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া হয়। মজা লাগলেও এ ধরনের খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না। এ ব্যাপারে একটু সতর্ক হওয়া দরকার। তাছাড়াও সাহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
ইফতারে খাদ্যাভ্যাস: খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তু বা ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে দু-তিনটা খেজুরই শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে দিতে পারে, তবে সঙ্গে পানি পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণে। ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। এ সময় একটি ফল খাবেন, ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন। দই, চিড়া ও কলা খেলে ভালো। বেগুনি ও পেঁয়াজু বাদ দেওয়াই ভালো। রোজায় ভাজাপোড়া খাবার প্রায় সবারই প্রিয়, কিন্তু ভাজাপোড়া জাতীয় ইফতারি গ্রহণের ফলেই অনেক রোজাদার শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেন। মিষ্টি খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন জিলাপি। সারাদিন রোজা শেষে জিলাপি সুগার লেভেল দ্রুত বাড়িয়ে দেবে।
সাহরিতে খাদ্যাভ্যাস: যেকোনো ধরনের খাবারই সাহরিতে খাওয়া যায়, তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবার যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। যেহেতু রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতে হয় তাই সাহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত। কারণ শর্করা জাতীয় খাবার ধীরগতিতে হজম হয়। ফলে দিনের বেলায় ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। জটিল শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজ জাতীয় খাবার, অপরিশোধিত বা নন-রিফাইনড আটা, ময়দা এবং ঢেঁকিছাঁটা চাল। ভাত মুখ্য খাবার। তাই সাহরিতে সাদা ভাত রাখবেন। ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস ও ডিম। খরচ কমাতে চাইলে ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম ও ডাল। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সাহরির খাবার তালিকায় যেকোনো একটি সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। পাকস্থলীতে উত্তেজনা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয় সাহরিতে। রোজায় সাহরি এবং ইফতারি ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সেগুলো হলো-
প্রচুর পরিমাণে পানি পান: রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাসের কারণে শরীরে পানির অনেক চাহিদা থাকে। সাহরি খাওয়ার পর যেন ৩-৪ গ্লাস পানি খেতে পারবেন এমন সময় হাতে রেখে খাবার গ্রহণ করুন। আবার ইফতারি থেকে সাহরি পর্যন্ত ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হবে না।
সাহরির পর চা/ক্যাফেইন নয়: সাহরির পর অনেকেই চা পান করে থাকেন। চায়ের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। এই ক্যাফেইন প্রসাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে খনিজ লবণ ও পানিস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। সাহরির পর কলা খাওয়া যেতে পারে। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। তবে কলা কারও কারও ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে থাকে। সে ক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবার সঙ্গে খেলে সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রে বেলও খেতে পারেন।
তেল-চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার: তেলে ভাজা খাবার ক্ষুধা কমায় এবং এসডিটির সমস্যা বাড়ায়। কয়েকবার ব্যবহার করা তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যানসার সৃষ্টি করে। তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে অনেক ধরনের ফল দিয়ে সালাদ গ্রহণ করতে পারেন। হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
পরিমিত ঘুম: হজমে ঘুম অত্যন্ত দরকার। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৫-৭ ঘণ্টা টানা ঘুম প্রয়োজন। রাতে তারাবিহ্ নামাজের পর দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার। অনেকেই রাতে না ঘুমিয়ে একবারে সাহরির পরে ঘুমাতে যান যা একদমই উচিত নয়। একই সঙ্গে অধিক ঘুম রোজা রেখে খুবই ক্ষতিকর। শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বদহজম হয়।
অসুস্থতায় করণীয়: উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ মেপে দেখা প্রয়োজন যাতে কম বা বেশি রক্তচাপ কোনোটাই না হয় এবং প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে। ইনসুলিন যারা নেন, তাদের ইনসুলিন দিয়ে ইফতারের মূল খাবার খাওয়া উচিত। মাঝে মধ্যে রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখবেন।