ডিএমপি নিউজ: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ করেছিলেন অকুতোভয় বীর পুলিশ সদস্যরা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাজারবাগে শহিদ হয়েছিলেন অনেক বীর সাহসী পুলিশ সদস্য। সকল শহিদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫শে মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উদযাপন করা হয় স্বাধীনতার প্রথম প্রহর।
প্রতিবারের মতো ২৫ মার্চ ২০২৪ খ্রি. সোমবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন অনুষ্ঠানে রাত ১২টা ০১ মিনিটে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম-বার, পিপিএম ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিপিএম-বার, পিপিএম-বার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী, এমপি বলেন, আমি সেদিন খিলগাঁও এ আমার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম এবং আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম কিভাবে পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যরা তাদের নিজের জীবন বাজি রেখে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাদের সেই হার না মানা লড়াই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম প্রেরনা হিসেবে তখন কাজ করেছিল। পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যদের প্রথম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শক্তি পেয়েছিলাম। আমি গর্বিত যে আজ আমি সেই পবিত্র মাটিতে এসেছি এবং পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম-বার, পিপিএম তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত সকল পুলিশ সদস্য ও সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
আইজিপি বলেন, রাজারবাগ থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সূচনা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজারবাগের বীর পুলিশ সদস্যরা ২৫শে মার্চ রাতে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীনতার জন্য প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করে আমাদের গর্বিত করেছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বীর পুলিশ সদস্যরা অনেক আগে থেকেই যুদ্ধের জন্য মনেপ্রাণে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহবানের পর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তারা পরিকল্পনা শুরু করে। দেশের স্বাধীনতার জন্য যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বীর পুলিশ সদস্যরা। বীর পুলিশ সদস্যদের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
ডিএমপি কমিশনার ও বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাবিবুর রহমান, বিপিএম-বার, পিপিএম-বার বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে রাজারবাগের পবিত্র মাটি থেকে বীর পুলিশ সদস্যরা জীবন দিয়ে তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু ও বিজয়গাথা রচনা করেছিলেন। এজন্য ২৫শে মার্চ রাতকে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে কালরাত হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা এ দিনটিতে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করি।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জানত পুলিশ বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে আর সেই কারনেই তারা আমাদের পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে এবং এই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আক্রমন করে। তাদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে আমাদের অকুতোভয় বীর পুলিশ সদস্যরা সেদিন থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে এবং সারা রাত তারা যুদ্ধ করে। এতে আমাদের অনেক বীর পুলিশ সদস্য তাদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের বীর পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দিনটি আমাদের মাঝে এসেছে। দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহ ছিল বলেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের বীর পুলিশ সদস্যরা স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন বিপন্ন করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন অনুষ্ঠানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।
এসময় বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।