ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে তিন বছর আগে ছুরি মেরে হত্যার দায়ে দর্জি দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল হকের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বৃহস্পতিবার আসামির উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামি ওবায়দুল হককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় মামলার রায়ে।
রায় শুনতে উপস্থিত হওয়া উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা আদালতের প্রাঙ্গণে আনন্দ প্রকাশ করে।
সিদ্দিক বাজারের ব্যবসায়ী রমজান হোসেনের মেয়ে রিশা ঢাকার কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
২০১৬ সালের ২৪ অগাস্ট দুপুরে স্কুলের সামনে ফুটব্রিজে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। চার দিন পর হাসপাতালে মারা যায় ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী।
হামলার দিনই রিশার মা তানিয়া বেগম রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৩২৪/৩২৬/৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর আঘাতের অভিযোগে মামলা করেন। রিশা মারা যাওয়ার পর এটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়।
৩১ আগস্ট নীলফামারীর ডোমার থেকে গ্রেফতার করা হয় ওবায়দুলকে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে ওবায়দুল ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্স নামের একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
তদন্ত শেষে রমনা থানার পরিদর্শক আলী হোসেন ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর ওবায়দুলকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। রিশার চার সহপাঠীসহ ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয় সেখানে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিশার মা তানিয়া ওই হত্যাকাণ্ডের ৫-৬ মাস আগে রিশাকে নিয়ে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এরপর দোকানের রসিদের কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল ফোনে রিশাকে বিরক্ত করতে থাকেন। রিশা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওবায়দুল তাকে ছুরি মেরে হত্যা করেন।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল আদালত অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামি ওবায়দুলের বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
বাদীপক্ষের ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ২১ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিচারক বৃহস্পতিবার আসামি ওবায়েদুলকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজার রায় দিলেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “ভালোবাসার অধিকার সবারই আছে, কিন্তু ভালোবাসার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো ন্যক্কারজনক, ভয়ঙ্কর অন্যায়। ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের ঘটনা ঘাটনোর সাহস না পায়, সেজন্য আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”