জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধ মামলা করেছে গাম্বিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রী আবুবকর তামবাদউ এটি নিশ্চিত করেছেন।
গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দু’দেশেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ যেটি শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে মূলত জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি হয়েছে বলে দশটি বেসরকারি সংস্থার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সংস্থার এসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস ডিরেক্টর পরম প্রীত সিংহ বলছেন, “গাম্বিয়ার আইনি পদক্ষেপ বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আইনি প্রক্রিয়ার সূচনা করলো যেটা প্রমাণ করতে পারে যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতা জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে”।
যেসব বেসরকারি সংস্থা এ উদ্যোগকে সমর্থন করছে তাদের মধ্যে আছে নো পিচ উইদাউট জাস্টিস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারে ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাগুলো।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিলো সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে এবং তাতে প্রমাণ হয়েছিলো যে সার্বিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিলো।
কানাডা, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তুরস্ক এবং ফ্রান্স জোর দিয়ে বলেছে যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে। ইসলামী দেশসমূহের সংগঠন ওআইসি তার ৫৭টি সদস্য দেশকে উৎসাহিত করেছে যেন তারা মিয়ানমারকে আদালতে নিয়ে আছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও অভিযোগ করেছেন যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে এবং তিনিও মিয়ানমারকে আদালতে তোলার প্রয়াস নেবার আহ্বান জানান।
নো পিস উইদাউট জাস্টিস নামে একটি সংস্থার একজন পরিচালক এ্যালিসন স্মিথবলেন, দি গাম্বিয়া এমন একটি দেশ যারা কিছুকাল আগেই একনায়কতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। এমন একটি দেশ যে রোহিঙ্গা গণহত্যার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে তা সাধুবাদ পাবার যোগ্য, এবং অন্য দেশগুলোর উচিত এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সমর্থিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্য-অনুসন্ধানী মিশন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে “গণহত্যা ঠেকানো, তদন্ত করা এবং এর শাস্তির আইন করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার।
তথ্যানুসন্ধানী মিশন বলেছে, নারীদের ওপর যে যৌনসহিংসতা চালানো হয়েছে তার প্রকৃতি এবং মাত্রা থেকেই বোঝা যায় যে মিয়ানমার রাষ্ট্রের ইচ্ছা ছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনের এশিয়া পরিচালক আন্দ্রেয়া গিওরগেটা বলেন, দি গাম্বিয়ার করা মামলা মিয়ানমারের ওপর ‘সহিংসতার পথ ত্যাগ করা এবং দোষীদের শাস্তি দেবার জন্য’ চাপ সৃষ্টি করতে পারে।সূত্র:বিবিসি