শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাস গড়তে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ২০৪ রান। ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান করে ফেলায় দলটির জয় সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি শ্রীলঙ্কার। সোমবার পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দলটি।
অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেল, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ও হিথ স্ট্রিকরা জিম্বাবুয়ের সোনালী সময়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেননি। অথচ সিকান্দার রাজা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজারা ‘দুর্বল’ একটি দল নিয়েই ইতিহাস গড়েছেন।
হাম্বানটোটার মাহিন্দ রাজাপাকশে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ে বোলারদের তোপের মুখে পড়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রানে আটকে যায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭১বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা এবং সোলোমন মিরে ৯২ রানের জুটি গড়লে উড়ন্ত সূচনা পায় জিম্বাবুয়ে। এরপর তারিসাই মুসাকান্দার দারুণ ব্যাটিংয়ে ১ উইকেটে ১৩৭ রানে পৌঁছে অনেকটাই নির্ভার ছিল জিম্বাবুয়ে। তবে ১৩৭ থেকে ১৫২ রানের মধ্যে মাসাকাদজা, ক্রেইগ আরভিন ও সিন উইলিয়ামসের উইকেট তুলে নিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে শ্রীলঙ্কা।
মিনি-ধসের পর পঞ্চম উইকেটে ১৩ রানের জুটি গড়েন ম্যালকম ওয়ালার ও মুসাকান্দা। তবে লাসিথ মালিঙ্গা ও আকিলা ধনঞ্জয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৬৫ থেকে ১৭৫ রানের মধ্যে মুসাকান্দা, ওয়ালার এবং পিটার মুরকে আউট করে ম্যাচে ফিরে আসে লঙ্কানরা।
ধসের পরও ইতিহাস গড়তে বদ্ধপরিকর ছিলেন সিকান্দার রাজা এবং গ্রায়েম ক্রেমার। অষ্টম উইকেটে এই দুজন ২১ বলে ২৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
জিম্বাবুয়ের হয়ে মাসাকাদজা সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেন। তার ৮৬ বলের ইনিংসটি ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো ছিল। অন্যদিকে মিরে ৪৩ এবং মুসাকান্দা ৩৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে কক্ষপথে রাখেন। শেষদিকে সিকান্দার ২৭ এবং ক্রেমার ১১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে আকিলা ধনঞ্জয় সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন। এছাড়া মালিঙ্গা দুটি এবং আসেলা গুনারত্নে নেন একটি উইকেট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ছিল শ্রীলঙ্কা। একসময় ১২৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত আসেলা গুনারত্নের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২০০ রানের কোটা পার করে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দল।
শ্রীলঙ্কার হয়ে গুনারত্নে ৮১ বলে ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দানুসকা গুনাথিলাকা করেন ৫২ রান। অধিনায়ক ম্যাথুজের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। নিরোশান দিকভেলা (৩), কুশল মেন্ডিস (১), উপুল থারাঙ্গা (৬) ও ভানিদু হাসারাঙ্গা (০) ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হারের লজ্জা পেতে হয় লঙ্কানদের।
জিম্বাবুয়ের হযে সিকান্দার রাজা সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এছাড়া গ্রায়েম ক্রেমার দুটি এবং ম্যালকম ওয়ালার, সিন উইলিয়ামস ও টেন্ডাই চাতারা নেন একটি করে উইকেট।
পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৩০০ প্লাস রান করেও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। পরের দুটি ম্যাচে টানা জিতে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। তবে চতুর্থ ম্যাচে ঠিক ৩০০ রান করেও বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যায় ম্যাথুজের দল। সোমবারের হারটি তো অনেক দিন ধরেই পুড়াবে টিম শ্রীলঙ্কাকে। আগামী ১৪-১৮ জুলাই কলম্বোতে একমাত্র টেস্টে লড়বে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে।