লারা আল কাসেমের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ইসরায়েলের আদালত। আদালতের ভাষ্য, তাকে ইসরায়েলে ঢুকতে না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত সঠিক। জায়নবাদবিরোধী বিডিএস (বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট, স্যাংকশনস) আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার দায়ে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও লারাকে আটক করে রখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠিয়ে দিতে চায় দেশটি। তবে ডিপোর্টেশনের দিন ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। লারা এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা মিডিল ইস্ট আই জানিয়েছে, ইসরায়েলে পড়তে গিয়ে ইসরায়েলকে বয়কটের বদলে গ্রহণ করেছেন লারা, এমন ভাষ্যের ভিত্তিতে তাকে ইসরায়েলে থাকতে দেওয়ার যুক্তি দিচ্ছেন লারার ইসরায়েলি আইনজীবী। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ও ওই একই যুক্তিতে তার মুক্তি দাবি করেছে।
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ২২ বছর বয়সী লারা আল কাসেম যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস’ বিষয়ে পড়তে ইসরায়েলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। ইসরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে সে অনুমতিও দেয়। মিয়ামিতে অবস্থিত ইসরায়েলি কনস্যুলেট থেকে তাকে ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু ২ অক্টোবর তেল আবিব বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়, ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। লারা ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। স্টুডেন্ট ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাকে বিমান বন্দরের কাছে অবস্থিত একটি হাজতে থাকতে হচ্ছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে।
২০০৫ সালে শুরু হয় বয়কট, ডিভাস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন্স অর্থাৎ বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) আন্দোলন। দুনিয়াজুড়ে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, দেশটি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন বহু খ্যাতিমান শিল্পী-বুদ্ধিজীবী। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা লারা আল কাসেম বিডিএস আন্দোলনের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। আর সেই সূত্রেই তাকে ইসরায়েল থেকে বের করে দিতে চায় দেশটির সরকার।
বুধবার ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন এক মন্ত্রী আল কাসেমের মামলা পরিচালনা নিয়ে ইসরায়েল সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। গিলাদ এরদান নামের ওই মন্ত্রীর ভাষ্য, নিজেদের রক্ষা করার প্রয়োজনে সীমান্তে কাকে প্রবেশ কর দেবে আর কাকে দেবে না তা নির্ধারণের অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। লারা আল কাসেম যদি ব্যক্তিগতভাবে বিডিএস আন্দোলনের নিন্দা জানান তালে ইসরায়েল বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখতে পারে।
‘ইসরায়েলকে বয়কটে জেনেশুনে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখা’ ব্যক্তিদের দেশটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে গত বছর আইন পাস করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২০টি অধিকার কর্মীদের সংগঠনকে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েল। এসব সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ইসরায়েলে প্রবেশ করতে না দেওয়ার আইনি সুযোগ রয়েছে দেশটির সরকারের।
এদিকে ইসরায়েলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লারার মুক্তি ও ইসরায়েলে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আশের কোহেন বলেছেন, লারার আটকাদেশই বরং বিডিএসবিরোধী প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। লারা ইসরায়েলকে বয়কট করার আন্দোলনে যুক্ত থাকলেও তিনি সেই ইসরায়েলেই পড়তে গিয়েছেন এক বছরের জন্য। তার আইনজীবী ইয়োনাতান বেন হিলেলও একই দাবি করেছেন। তার ভাষ্য, ইসরায়েলে পড়তে যাওয়ার মাধ্যমেই তার মক্কেল স্পষ্ট করেছেন, তিনি কোনও কিছু বর্জন করছেন না ।