ডিএমপি নিউজঃ নৃশংস হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় গত ২২ জানুয়ারি ভোরে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কাছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান পথচারীরা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির লাশ শনাক্ত করে তার ছেলে খায়রুল ইসলাম। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মহির উদ্দিন। বয়স ৫০ বছর। যাত্রাবাড়ী আড়ত থেকে মাছ কিনে বিভিন্ন মহল্লায় বিক্রি করতেন তিনি। এরপর মামলার তদন্ত নামে পুলিশ।
এরপর ঐ ফ্লাইওভার থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। তাতে অস্পষ্টভাবে দেখা যায়, চলন্ত একটি লেগুনা থেকে কাউকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাউকে চেনা যাচ্ছিল না। তা ছাড়া গাড়িটির নম্বরও বোঝা যাচ্ছিল না। তবে লেগুনার পেছনে লাল রঙের পাদানিটি শুধু বোঝা যাচ্ছিল। এরপরই লাল পাদানির সেই লেগুনার সূত্র ধরে এগোতে থাকে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন।
এ সংক্রান্তে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাযাহারুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) ডিএমপি নিউজকে বলেন, মহির উদ্দিনের লাশ উদ্ধারের পর পুরো ঘটনা ক্লুলেস ছিল। প্রথমে ঐ ফ্লাইওভার থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুধু লেগুনার পেছনে লাল রঙের পাদানিটি বোঝা যাচ্ছিল। এরপরই লাল পাদানির সেই লেগুনার সূত্র ধরে এগোতে থাকে তদন্তকাজ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক বিলাল আল আজাদ যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার লেগুনা স্ট্যান্ডে কখনও যাত্রী আবার কখনও হেলপার পরিচয়ের ছদ্মবেশে কাজ শুরু করেন। এভাবে অন্তত তিন শতাধিক লেগুনা যাচাই করা হয়। এক পর্যায়ে গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর কদমতলীতে ভুলুর গ্যারেজে পাওয়া যায় সেই লাল রঙের পাদানির লেগুনা।
তিনি আরো বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে বিকেলে আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে একই দিন সন্ধ্যা ৭ টায় নারায়নগঞ্জ থানার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মঞ্জুর হোসেন ওরফে মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মঞ্জু জানায়, লেগুনাটি নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সাদ্দাম মার্কেটের সামনে থেকে নিহত মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনকে তোলা হয়। এরপর তার নিকট থেকে ৫৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে লেগুনা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফ্লাইওভারে ফেলে দেয় রুবেল ও রিপন। মঞ্জুর দেয়া তথ্য মতে কদমতলী থানার আরএস টাওয়ারের সামনে থেকে রুবেল ও রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লাল রঙের পাদানির লেগুনা এবং ছিনিয়ে নেওয়া ২০০০ টাকা উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।

ছবিঃ লেগুনার হেলপার বেশে এসআই বিলাল
গ্রেফতারকৃতরা একটা ভয়ংকর অপরাধী গ্রুপের সদস্য। যারা রাতের শেষ ভাগে লেগুনা গাড়ি নিয়ে যাত্রী তুলে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এরপর চলন্ত গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করে। নিহত মহির উদ্দিনও পড়েছিলেন ওই অপরাধী চক্রের খপ্পরে।
গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান, মঞ্জুর হোসেন ওরফে মানজুকে, রুবেল মিয়া ও মো. রিপন বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।