ডিএমপি নিউজ: শাহজাহানপুরে যুবলীগ নেতা শেখ ওয়ালিউল্লাহ রুবেলের নৃশংস খুনের ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা- মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো মোঃ শাহজালাল, মোঃ হাবিব আহসান, মোঃ আলিফ হোসাইন, মোঃ রবিউল সানি, মোঃ মেহেদী হাসান, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ নুর আলম ও মোঃ সুমন মীর। এসময় তাদের হেফাজত থেকে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৩-৮৬২৩), দুইটি মোটরসাইকেল (কুমিল্লা-ল-১১-৪৬৬২ ও ঢাকা মেট্রো ল-৫৯-৭০১৪) ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ২টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা এই প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দুটি পালানোর সময় ব্যবহার করে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মোঃ হাবিব আহসান, মোঃ আলিফ হোসাইন, মোঃ রবিউল সানি, মোঃ মেহেদী হাসান।
শনিবার রাত ০৮:৩০টায় মতিঝিল থানার পীরজঙ্গী মাজার সিগন্যালের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক টয়লেটের সামনে রাস্তা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগের মতিঝিল জোনাল টিম।
আজ রবিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গত ২১ জুলাই দিবাগত রাত ১২.৪৫টায় শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ১২ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী শেখ ওয়ালিউল্লাহ রুবেলকে সন্ত্রাসীরা তার বাসার সামনে নৃশংস ভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ফেলে চলে যায়। চিৎকার শুনে তার স্ত্রী তানজিনা দেওয়ান (বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য) বাসা থেকে বের হয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় রুবেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় রুবেলের স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো বলেন, নৃশংস এই খুনের ঘটনায় গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা, সিডিআর পর্যালোচনা এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের সনাক্ত করা হয়। অভিযু্ক্ত ব্যক্তিরা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল যোগে ঢাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মতিঝিল থানার পীরজঙ্গী মাজার সিগন্যালের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক টয়লেটের সামনে রাস্তা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দুটি চাপাতি মধ্যে একটি আবুজার গিফারীর কলেজের বিপরীত পাশের ঝোপঝাড় থেকে ও অপরটি ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশে ফাঁকা জায়গায় নারিকেল গাছের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ভিকটিম রুবেলের সাথে নিবিড় এবং শাহজালালের এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল। আধিপত্য বিস্তারের জেরে নিবিড় এবং শাহজালাল দুজন মিলে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে ঠিক করে। এরই ধারাবাহিকতায় নিবির চাপাতি কেনার জন্য হাবিবকে ৪,০০০ টাকা প্রদান করে। উক্ত টাকা দিয়ে হাবিব দুটি চাপাতি ক্রয় করে। ঘটনার আগের দিন শাহজালাল ও হাবিব দুজনে রুবেলকে খুনের পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক ঘটনার দিন অনন তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে রুবেলের গতিবিধি লক্ষ করতে থাকে। হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে রুবেলের বাসার সামনে অবস্থান নেয়। মেহেদী হাসান এবং সানি দুই পাশে পাহারায় থাকে। ভিকটিম রুবেল রিক্সাযোগে বাসার দিকে রওনা দেয়। অনন খবরটি মোটরসাইকেল চালিয়ে হাবিবকে দিলে হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকে। রুবেলকে রিক্সায় দেখেতে পেয়ে হাবিব এবং আলিফ চাপাতি নিয়ে এগিয়ে আসলে রুবেল দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। তখন পিছন থেকে হাবিব ও আলিফ তাকে ধাওয়া করে। আলিফ মাথায় চাপাতি নিয়ে কোপ দিলে রুবেল মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় হাবিব ও আলিফ চাপাতি দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চারজন একসাথে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় চাপাতি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যায়। নিবিড় ও অননকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃতদের শাহজাহানপুর থানায় রুজুকৃত মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।