ডিএমপি নিউজঃ সড়কে শৃংখলা ফেরাতে আগামীকাল থেকে দেশজুড়ে শুরু হবে ট্রাফিক সপ্তাহ। ট্রাফিক সপ্তাহের মাধ্যমে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের ব্যাপারে পুলিশ অনেক কঠোর হবো। ট্রাফিক আইন মানার সাংস্কৃতি ধারণ করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি পুলিশের নৈতিক সমর্থন রয়েছে।
আজ দুপুর ২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
বক্তব্যের শুরুতে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাইয়ের ঘটনায় সারা জাতিরমত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও শোকাহত। এ অনাকাঙ্কিত ঘটনার পরপরই জাবালে নূর বাস চালক, হেলপার ও মালিককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। জাবালে নূর পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট বিআরটিএ বাতিল করেছে। বর্তমানে চালক মাসুম পুলিশ রিমান্ডে আছে। এই ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা ৯ দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে নিজেরাই ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। এতে করে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্ঠি হয়েছে। দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ, পেশাজীবি, হজ্জযাত্রী, রোগীসহ সবাই। শিক্ষার্থীদের দাবিদাবা যৌক্তিক। অন্যান্যদের মত আমরাও এই যৌক্তিক দাবিগুলোর নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যৌক্তিক ৯ দাবি ইতোমধ্যে মেনে নেয়া হয়েছে। দাবির পক্ষে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাস্তার শৃংখলা ফেরাতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নিহত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজকে ৫ টি বাস হস্তান্তর করা হয়েছে এবং রাস্তা পারাপারের জন্য ওভারব্রীজ বানাতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভা মিটিং এ সড়ক পরিবহন আইন পাশ হবে। এই আইনের মাধ্যমে আমরা আশা করি সড়কের শৃংখলা ফিরে আসবে।
কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা দীর্ঘ দিনের। এর পেছনে নানান কারণ রয়েছে। ট্রাফিক শৃংখলা ফেরাতে ডিএমপি গত ৩ বছরে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। উল্টো পথে চলাচল, স্টীকার লাগিয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য, বিকন লাইট-হুটার, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা, গাড়ির রেজিস্টেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিট পরীক্ষা, ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ করাসহ নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো পর্যাপ্ত না থাকায় আমাদের চেষ্ঠা সফল হয়নি।
কমিশনার বলেন, রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, তাহদাহ, শৈতপ্রবাহ উপেক্ষা করে ট্রাফিক শৃংখলা ফেরাতে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশ রাত জেগে আপনাদের নিরাপদে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে। আপনি বিপদে পড়লে পুলিশ আপনার পাশে থাকে। সাংবিধানিক অনুযায়ী আমরা পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছ তা নিঃসন্দেহে মহত। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ আমরা কখনও ভাবিনি। তারা আমাদের সন্তান, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধরে তাদেরকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও পুলিশকে নিয়ে কমলমতি শিক্ষার্থীদের হতে কুৎসিত ও অশ্রাব্য ভাষায় লেখা প্লেকার্ডগুলি দেখে আমরা মর্মাহত। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সকল কুৎসিত ভাষার প্লেকার্ড তারা নিজেরা লেখেনি। কোন স্বার্থান্বেষী মহল পুলিশকে হেয় করার জন্য এই জঘন্য কাজটি শিক্ষার্থীদের দিয়ে করাচ্ছে।
কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার দীর্ঘ চাকরি জীবনে কখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, মিরপুর পুলিশ লাইন্সকে আক্রান্ত হতে দেখিনি। শিক্ষার্থীর বেশে কুচক্রী মহল পুলিশের স্থাপনাগুলোতে আক্রমন চালিয়েছে। তারা কাফরুল থানাও আক্রমন চালিয়েছে। এতে ইন্সপেক্টর অপারেশন মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ধানমন্ডিতে ট্রাফিক সার্জেন্টকে ডিউটিরত অবস্থায় আক্রমন করে গুরুতর আহত করেছে এবং তার ব্যবহৃত সরকারি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীরা যে লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছে তার জন্য তাদেরকে স্যালুট জানান কমিশনার। পুলিশের প্রতি আস্থা রেখে সকলকে ঘরে ও স্কুলে ফিরে যেতে আহবান জানান তিনি। সেই সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের স্কুল ও ঘরে ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা কামনা করেন।