শীতে সাধারণত ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। এসব রোগের মধ্যে টনসিল অন্যতম। টনসিল হলে ঢোক গিলতে ব্যথা, কথা বলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এ সবের সঙ্গে টনসিলের সংক্রমণ থেকে কখনও কখনও জ্বরও আসে। প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়া উপায়ে নিজের যত্ন নিলে টনসিল থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
রোগের লক্ষণ
তীব্র গলাব্যথা, মাথাব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা, খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়, কানে ব্যথা হতে পারে, মুখ দিয়ে লালা বের হয়, মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল স্ফীতি, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়, গলা ফুলে যাওয়া। কারণ: পুষ্টির অভাব, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করা টনসিলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস করলে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে শীতের প্রকোপ বেশি হলে, রোদ থেকে এসে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করলে, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে।
দুধে হলুদ
ফোটানো দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। হলুদের অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান সংক্রমণ সরায়। এ ছাড়া হলুদ প্রাকৃতিক ভাবেই অ্যান্টিসেপটিক উপাদানে ভরপুর। তাই হলুদের প্রভাবে গলার প্রদাহও সারে অনেকটাই।
গ্রিন টি ও মধু
তিন কাপ পানিতে এক চা চামচ গ্রিন টি ও এক চামচ মধু দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিন। এই চা একটা ফ্লাস্কে রেখে দিন। উষ্ণ থাকাকালীন অল্প অল্প করে বার বার খান। গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি শরীরের জীবাণুর সঙ্গে লড়াইও করে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান প্রদাহ কমায় টনসিলের।
গরম পানিতে লবণ
গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে মুখ দিয়ে ভাপ নিন। এই সময় চাদর দিয়ে নিজেকে মুড়ে ফেলুন। কান-মাথা যেন অবশ্যই জড়ানো থাকে। গলা ব্যথা, টলসিলের অসুখ থেকে অনেকটা আরাম দেয় এই লবণ পানির ভাপ।
চায়ে আদা কুচি
দেড় থেকে দুই কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি আর চা পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার এভাবে চা খেলে উপকার পাবেন। আদার অ্যান্টি ব্যকটেরিয়াল আর অ্যান্টি ইনফালামেন্টরি উপাদান সংক্রামণ ছড়াতে বাধা দেয়। ফলে টনসিলের ব্যথা কমে যায়।
গরম পানি ও লেবুর রস
এক গ্লাস সামান্য গরম পানিতে ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু, আধা চামচ লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। এটি টনসিল ব্যথা দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।
এছাড়াও অন্য চিকিৎসা: প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যত দিন সুস্থ না হবে। মুখের হাইজিন (মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য) বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে। এটাকে মাউথ ওয়াশ বলা হয়, যা দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না। যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে এবং জ্বর থাকে, সে ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধসহ কিছু ওষুধ দেওয়া হয় এবং এটা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। ওষুধ নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রোপচার। যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে টনসিল কেটে বা অস্ত্রোপচার করে ফেলাই ভালো।