ডিএমপি নিউজঃ ‘‘সহিংস উগ্রবাদ” বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অত্যন্ত যুগোপযোগী একটি বিষয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গীকারের প্রয়োজন রয়েছে। ডান-বাম বা ধর্মীয় কোনো ধরনের উগ্রবাদই এ দেশের মানুষ অতীতেও গ্রহণ করেনি, ভবিষ্যতে করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।
আজ ২ মার্চ শনিবার এফডিসিতে ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী’ বিতর্ক প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহযোগিতা করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্প।
তিনি আরও বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি ছিল খুবই প্রাণবন্ধ। যা আমাদের সকলকে মুগ্ধ করেছে। সহিংস উগ্রবাদ শুধু আমাদের একার সমস্যা না। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। সরকারি ও বিরোধী দুইটি দলই চমৎকার সাবলীল ভাষায় তাদের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে। চমৎকার বাচন ভঙ্গি, উচ্চরণ ও তথ্য বহুল বক্তব্যে দুই দলই ভালো করেছে। ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকারের কারণে আজ উগ্রবাদের শেকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। অনেক উন্নত দেশও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের মতো এত দ্রুত সাফল্য দেখাতে পারেনি। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর গ্রামে গ্রামে পাড়া-মহল্লায় সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যে ঐক্যমত তৈরি হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও সামাজিক সচেতনতার কারণে। রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গীকার পাশাপাশি হাত ধরে চললে আমরা আমাদের সমাজ থেকে সহিংস উগ্রবাদকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হবো।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো উগ্রবাদ-সহিংসতার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করতে গিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ইতিমধ্যেই অনেক অভিজ্ঞতা ও সাফল্য অর্জন করেছে। কেবল হত্যা, গ্রেপ্তার বা শাস্তি প্রদান করে জঙ্গি-উগ্রবাদ প্রতিহত করা সম্ভব নয়। শুধু যে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণেই সহিংস উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু নয়। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বঞ্চনাও এর জন্য দায়ী। তবে কী কারণে আমাদের তরুণরা সহিংস উগ্রবাদী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে আরও বেশি করে অনুসন্ধান করতে হবে।
কোয়ার্টার ফাইনালে সরকারি দল হিসেবে অংশ নেয় লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা ও বিরোধী দল হিসেবে ছিল নরসিংদীর জামেয় কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এই প্রথমবার কোন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করল।
নিজেদের সপক্ষে মান সম্পন্ন ও যুগোপযোগি যুক্তি উপস্থাপন করে কোয়ার্টার ফাইনালে বিজয়ী হয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সরকারি দলের সদস্যরা। প্রথমবারের মত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যুক্তি তর্ক ছিল অসাধারণ। যুক্তি তর্ক দিয়ে উপস্থিত সকলকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিল এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারি বিতার্কিকদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাবেক অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিম, সাংবাদিক পারভেজ রেজা এবং ফ্রী-ল্যান্স সাংবাদিক জাহিদ রহমান।
প্রায় দীর্ঘ তিন মাস বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতা পার করে মূল পর্বে কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণ করেছে ৮টি দল। এখান থেকে ৪টি দল যাবে সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে বিজয়ী দুইটি দল অংশগ্রহণ করবে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে। বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা বিতর্ক অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করবে।