ডিএমপি নিউজঃ মুক্তির পানে, যুক্তির বানে, দূর হোক সন্ত্রাস তারুণ্যের জয়গানে স্লোগানকে উপজীব্য করে শেষ হলো সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৯। সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী সচেতনতা সপ্তাহ ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আজ (২৮ জুন) শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি ২৭-২৮ জুন ২০১৯ এই দুইদিন ধরে বাংলাদেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি টিমের অংশগ্রহণে চলমান ছিল। সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কের বিষয় ছিল সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব উগ্রবাদের প্রধান কারণ। সংসদীয় পদ্ধতিতে বিতর্কের বিষয়ে পক্ষ নিয়ে সরকার দলে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিপক্ষে বিরোধী দল ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের প্রধান শায়ান সাদি ইস্তি।
ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) এর যৌথ আয়োজনে উক্ত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসি’র প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত ডিএমপি কমিশনার) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি’র সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সহিংস উগ্রবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে পারি কিন্তু সন্ত্রাসবাদের কারণ ও আদর্শ দমন করা সম্ভব হবে সচেতনতা ও কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে। আমরা বিশ্বাস করি যেকোন নেতিবাচক পরিবর্তন তরুণদের হাত ধরে আসে। তেমনি উগ্রবাদেও তরুণরাই বেশি ঝুঁকছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দায়িত্ব এই তিনটি থাকলে কেউ উগ্রবাদে জড়াবে না। তরুণদের উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রমে জড়াতে আমরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে ডিইউডিএস এই ধরণের বিতর্ক প্রতিযোগিতা করতে চাইলে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করব। এছাড়াও সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট করে সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেজন্য কেউ ভালো কনটেন্ট নিয়ে আমাদের কাছে আসলে আমরা তাকে সমস্ত পৃষ্ঠপোষকতা দিব। আমাদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বাংলাদেশ থেকে উগ্রবাদ বিতারিত হবে।
এমন সুন্দর ও যুগোপযোগি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সিটিটিসি ও ডিইউডিএসকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, সিটিটিসি’র আহবানে বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২টি দল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। বিতর্কের সবচেয়ে যোগ্য একটি হাতিয়ার যুক্তি আর উগ্রবাদে র্যাডিকালাইজেশনে যুক্তির উপস্থিতি থাকে না। আমরা মনে করি যেখানে যুক্তির উপস্থিতি আছে সেখানে উগ্রবাদ থাকতে পারে না। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যপরিধি ও গতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে উগ্রবাদ থাকবে না। বিতর্কের বিষয়বস্তু দেখে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করায় সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে চ্যাম্পিয়ন দল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন।
চ্যাম্পিয়ন দল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিকে পুরস্কার হিসেবে ৯০ হাজার টাকা, ট্রফি ও ব্যক্তিগত পুরস্কার তুলে দেন এবং রানার্স আপ দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিকে ৪৫ হাজার টাকা, ট্রফি ও ব্যক্তিগত পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত চলমান রয়েছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট আয়োজিত ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী সচেতনতা সপ্তাহ ২০১৯’। এই চলমান সপ্তাহে সিটিটিসি’র পক্ষ থেকে সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অন্যতম। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।