যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু হচ্ছে মানবতার৷ ফের রক্তাক্ত দেশটির অবস্থা তুলে ধরেছে একটি মর্মান্তিক ছবি৷ যা প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোড়ন৷ ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে বিমান হানায় ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে একটি বহুতল বাড়ি৷ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে বছর সাতের এক শিশুকন্যা ও তার সাত মাস বয়সি বোন৷ তাকে বাঁচাতে, শিশুটির জামা টেনে ধরে রয়েছে বড় বোন। কিছুটা উপরে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করছেন তাদের বাবা। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ছোট্ট বোনকে বাঁচানোর এই লড়াইকে চোখের জলে কুর্নিশ জানিয়েছে বিশ্ব৷ তবে ছোট্ট বোন টোকার জীবন বাঁচিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বড়বোন রিহাম৷
ঘটনাটি ঘটেছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের ইদলিব প্রদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত আরিহা শহরে। সরকার বিরোধী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ওই শহরে লাগাতার বোমাবর্ষণ করছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও রাশিয়া৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদ আগেই জানিয়েছিলেন, ইদলিব প্রদেশ থেকে যেকোনও মূল্যে বিদ্রোহীদের হঠিয়ে দেওয়া হবে৷ প্রায় আট বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে একমাত্র ইদলিব প্রদেশেই সরকার বিরোধীদের দখলে রয়েছে৷
এদিকে, দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের পরাজয়ের পর রাশিয়ার সাহায্যে ইদলিব দখল নিতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট আসাদ৷ গত বুধবারও আরিহা শহরে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করে সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমান বাহিনী৷ তখনই একটি বোমা এসে পড়ে আমজাদ-আল-আবদুল্লাহর বাড়িতে৷ প্রচণ্ড অহাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় বহুতলটি৷ কংক্রিটের চাঙড়ের নিচে চাপা পড়ে যায় আবদুল্লাহর পরিবার৷ এই গত ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন স্থানীয় এক চিত্রসাংবাদিক৷
জানা গিয়েছে, ভেঙে পড়া বহুতলটি উদ্ধার করে টোকাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় চোট লাগায় আপাতত আইসিইউতে রাখা হয়েছে শিশুটিকে। পাশাপাশি, তার জন্য ২৪ ঘন্টা কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ওই বাড়িটি ভেঙে তাদের মা এবং এক বোনও প্রাণ হারিয়েছে। উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তুপ থেকে টোকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় যুদ্ধের বলি হয়েছেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে, ১০ লক্ষের বেশি মানুষকে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়েছে।