সত্তরটা বসন্ত একসঙ্গে, এক ছাদের নিচে কাটিয়েছেন তাঁরা। সত্তর বছরের যাত্রাপথে ভাল-মন্দ মুহূর্ত যা-ই এসেছে, একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এর পর কী করে একে অপরকে ছেড়ে থাকতেন! আলাদা থাকার, একা থাকার অভ্যেসটাই ছিল না দুজনের মধ্যে কারও। প্রেমের এও এক সংজ্ঞা! যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকার সত্ত্বা সত্তর বছর পরও একইরকম মলিন থাকে। সত্তর বছর পরও একে অন্যের হাত ধরে তাঁদের মনে হয়েছে হয়তো, আরও ক’টা দিন একসঙ্গে থাকতে পারলে ভাল হত। তবে আলাদা হয়ে একটা দিনও নয়।
ভালবাসার অনেক গল্প হয়তো এখনও পর্যন্ত শুনেছেন। কখনও গল্পের কথা। কখনও বাস্তবের। এ কাহিনি আরও একবার আপনার মনে প্রেমের প্রতিষ্ঠা দিতে পারে। শতচ্ছিন্ন হৃদয় নিয়েও আরও একবার আপনার ভালবাসায় বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছে হতে পারে। সত্তর বছর এবং তার পরও এই দম্পতি এমনই নিদর্শন ছেড়ে গেলেন। হাজারো দুষ্কর্ম, ঘৃণা, হানাহানির মাঝেও প্রেম এখনও এই দুনিয়ার প্রধান চালিকা শক্তি। যেন এটাই বুঝিয়ে গেলেন ৯২ বছর বয়সী ফ্র্যান্সিস আর্নেস্ট প্ল্যাটেল ও তাঁর ৯০ বছর বয়সী স্ত্রী নরমা জুন প্ল্যাটেল।
৭০ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর তাঁরা কেউই আর একা থাকতে চাননি। একটা দিনও নয়। তাই পরস্পরের হাতে হাত রেখে মৃত্যুবরণ করলেন দুজনে। অস্ট্রেলিয়ার এই দম্পতিকে নিয়ে এখন দুনিয়াজুড়ে আলোচনা চলছে।
নরমা দীর্ঘদিন ধরে আলঝেইমার রোগে ভুগছিলেন। ফ্র্যান্সিসও বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দুজনকে একই ঘরে রাখা হয়। দুজনের খাট ছিল পাশাপাশি। চিকিত্সা চলছিল। হঠাত্ই একদিন নরমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অস্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করেন তিনি। হঠাত্ করে ফ্র্যান্সিসও অস্থির হয়ে ওঠেন। প্রায় একই সময়। দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নার্স ১০ মিনিট অন্তর তাঁদের পরীক্ষা করছিলেন।
সেই নার্সই দশ মিনিটের ব্যবধানে পরীক্ষা করতে এসে দেখেন, দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা দুজনের মৃত্যুর সঠিক মুহূর্ত জানাতে পারেননি। তাই দুজনের মৃত্যু প্রায় একসঙ্গে বলেই ধরা হয়েছে। আর হ্যাঁ, মৃত্যুর সময় দুজনে দুজনের হাত ধরে ছিলেন। শুনেছেন এমন প্রেমকাহিনি আগে?