স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সুপেয় পানি ও কৃষি কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর অধিকহারে নির্ভরশীলতার কারণে ইতোমধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩ মিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশনের ৩য় কার্যদিবসে সরকারি দলের সদস্য আমিনা আহমেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকার প্রতি ৫০ জন ব্যক্তির জন্য একটি ‘ওয়াটার পয়েন্ট’ শীর্ষক জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কাজ করছে। তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমে নলকূপে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর, দীঘি,জলাশয়সমূহ পুনঃখনন,সংস্কার’ শীর্ষক এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৮০৯টি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। সরকার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিবছর গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপন এবং উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় পুকুর খনন প্রকল্প নিয়েছে।
রাজধানীতে ৭০% পানি সরবরাহ হবে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে:
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুপেয় পানির সংকট দূর করার জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পন্ড স্যান্ড ফিল্টার ও পাতকুয়া ব্যবহারে জনসাধারণকে সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় শতকরা ৭০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা এ লক্ষ্যে তিনটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ নামে একটি পানি শোধনাগার চালু করেছে। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের নির্ভরতা কমে শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে শতকরা ২০ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে আরও ৩টি ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, দৈনিক ২শ’ মিলিয়ন লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রাজশাহী ওয়াসার ‘ভূ-উপরস্ত পানি শোধনাগার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী ওয়াসায় ১শ’ ভাগ ভূ-উপর’ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘খুলনা পানি সরবরাহ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
দেশ প্রায় শতভাগ স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছে
সরকারি দলের সদস্য মমতাজ বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশকে প্রায় শতভাগ স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। রূপকল্প ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশে স্যানিটেশন ব্যব¯’া শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগ জনগণ মৌলিক স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ৬১ ভাগ জনগণ উন্নত ল্যাট্রিনের আওতাভুক্ত রয়েছে। বাকি ২৮ ভাগ জনগণ যৌথ ল্যাট্রিন এবং ১০ ভাগ অনুন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন। বিশেষ করে খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে, যা ২০০৩ সালে ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ।