মঙ্গল, বৃহস্পতি বা শনি নয়। সৌরমণ্ডলের বাইরে ভিন গ্রহের কোনও ভিন মুলুকও নয়। এ বার সরাসরি সূর্যকে ছুঁতে যাচ্ছে মানবসভ্যতা!
এই প্রথম সরাসরি সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা ‘করোনা’য় ঢুকে যাবে কোনও মহাকাশযান। গনগনে তাপে ঝলসে যাওয়া সূর্যকে ছোঁয়ার যে দুঃসাহস এর আগে আর কোনও মহাকাশযানই দেখাতে পারেনি।
সূর্যের পিঠ থেকে মাত্র ৪০ লক্ষ মাইল দূরে ‘করোনা’য় একটি কক্ষপথে পৌঁছে যাবে নাসার রোবটিক মহাকাশযান ‘সোলার প্রোব প্লাস’(এসপিপি)। এর আগে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছনোর দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল আর যে সব মহাকাশযান, তাদের চেয়ে ৭ গুণ বেশি কাছাকাছি পৌঁছে যাবে এই সোলার প্রোব প্লাস। ফলে, অসম্ভব রকমের তাপে তাকে ঝলসে যেতে হবে প্রতি মুহূর্তে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় নাসার তরফে ওই দুঃসাহসিক অভিযানের ঘোষণা করা হবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম এখহার্ডট রিসার্চ সেন্টার অডিটোরিয়ামে। সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির থাকবেন ওয়াশিংটনে নাসার সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর টমাস ঝুরবুশেন, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশন প্রোজেক্ট সায়েন্টিস্ট নিকোলা ফক্স, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ইউজিন পার্কার ও অধ্যাপক এরিক আইজ্যাক্স এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল সায়েন্স ডিভিশনের ডিন রকি কোলব।
নাসার তরফে খবর, ২০১৮–র ৩১ জুলাই থেকে ১৯ অগস্টের মধ্যে সূর্যকে ছুঁতে পৃথিবী থেকে রওনা হয়ে যাবে সোলার প্রোব প্লাস। কেপ কানাভেরাল থেকে ডেল্টা ফোর রকেটের পিঠে চাপিয়ে সোলার প্রোব প্লাসকে পাঠানো হবে সূর্যের মুলুকে। বুধকে পাশ কাটিয়ে তা সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়বে আজ থেকে ঠিক সাত বছর পর, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর। তার আগে পৃথিবী থেকে রওনা হয়ে সোলার প্রোব প্লাস বুধের কাছাকাছি প্রথম পৌঁছবে ২০১৮–র ২৭ সেপ্টেম্বর। আর সোলার প্রোব প্লাস সূর্যের মুলুকে ঢুকে পড়ার আগে বুধকে শেষ বারের জন্য টা টা জানাবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর।
সোলার প্রোব প্লাস প্রকল্পে জড়িত মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সোলার ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘উৎক্ষেপণের সময় ওই মহাকাশযানটির ওজন থাকবে ৬১০ কেজি। একটা বড় গাড়ির মতো চেহারা ওই সোলার প্রোব প্লাসের। করোনায় সূর্যের কক্ষপথে পৌঁছে মহাকাশযানটি দৌড়বে সেকেন্ডে ২০০ কিলোমিটার বা ১২০ মাইল গতিবেগে। সূর্যের তাপ আর সৌর বিকিরণের হাত থেকে বাঁচাতে থাকবে সোলার প্রোব প্লাসের ‘হিট শিল্ড’। যাকে সহ্য করতে হবে প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।’’
মিশন প্রোজেক্ট সায়েন্টিস্ট, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলা ফক্স আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের ই–মেল জবাবে লিখেছেন, ‘‘সৌরবায়ু (সোলার উইন্ড), সৌরঝড় (সোলার স্টর্ম) ও করোনাল মাস ইজেকশনের (সিএমই) মতো কিছু ঘটনা রয়েছে যা মানবসভ্যতার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের উৎস বা মতিগতি সম্পর্কে আমাদের এখনও ততটা ধারণা নেই। যা থাকলে আমরা সভ্যতাকে বাঁচানোর প্রস্তুতি নিতে পারি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারি। এই অভিযান বিজ্ঞানীদের সামনে সেই সুযোগটা এনে দেবে।’’
এ ছাড়াও সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে বোঝা, সৌরবায়ুর সময় সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের আচার–আচরণ কেমন হয়, তা জানার দরজাটাও খুলে দেবে এই সোলার প্রোব প্লাস। জানা যাবে কেন সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা অতটা গরম, সৌরবায়ুর গতি বাড়িয়ে দেয় কে, তা–ও।