ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর হাজারীবাগে ব্যবসায়ী এখলাছ হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মনির হোসেনসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঝন্টু মোল্লা, আঃ রহমান ওরফে রহমান কাল্লু, মো: এসহাক, ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী শিল্পপতি মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির। গ্রেফতারের সময় মনিরের হেফাজত থেকে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল ফোন, নগদ ২২ হাজার টাকা ও ৫ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গত ২৮ জুন রাতে হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচরের ভূমি ব্যবসায়ী এখলাছ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। আত্মীয়-স্বজন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি জিডি করে। ঈদের পরের দিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পশ্চিম পাশে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষা প্রান্ত থেকে বস্তাবন্দি এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। এখলাছের আত্মীয়-স্বজন লাশ শনাক্ত করলে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এরপর কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ লাশ গুমের ঘটনায় একজন ভ্যানচালক ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনস্হলের টপ টেইলার্সের মালিককে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৬ জুলাই মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হলে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। পূর্বে গ্রেফতারকৃত দু’জনের স্বীকারোক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারীসহ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী দুইজনকে শনাক্ত করে। গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে ঘটনার পর পরই মূল পরিকল্পনাকারী মনির কলকাতায় ও সমন্বয়কারী ঝন্টু মোল্লা থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ২০ জুলাই থাইল্যান্ড থেকে ঢাকায় ফেরত আসলে বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ ঝন্টু মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। ঝন্টু বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ০৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে।ঝন্টুর কাছে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম অভিযানে নামে। অভিযানে এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জ থেকে কিলার আঃ রহমান ওরফে রহমান কাল্লুকে ও সমন্বয়কারী মোঃ এসহাককে গ্রেফতার করা হয়। ডিবির অপর দুইটি টিম মাগুরা জেলায় ও যশোরের বেনাপোল পোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে কিলার ফয়সাল ও মূল পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা, অর্থদাতা শিল্পপতি মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনিরকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, হাজারীবাগ ও সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমি দস্যূ ও দালাল। বিভিন্ন সময়ে সে ভিকটিম এখলাছকে দিয়ে জায়গা দখল এবং কেনা-বেচার কাজ করাতো। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এখলাছ ও মনিরের যৌথভাবে ৪০ শতকের একটা বড় জায়গা আছে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে মনির পাবে ৩৫ কোটি টাকা। মনির চেয়েছিলো জায়গার সব টাকা নিজে নিয়ে নিবে। কিন্তু বাদ সাঁজে এখলাছ, সে মনিরের এই চেষ্টা রোধ করতে একাধিক মামলা ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে। মামলা ও অভিযোগের ফলে মনির দেখলো যে সে তার ভাগের ৩৫ কোটি টাকাও পাচ্ছে না। এ ঘটনায় মনির মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এখলাছের ওপর। এছাড়াও বিথি নামের একটি মেয়ের সাথে এখলাছের বিয়ে দিয়েছিলো মনির। কিন্তু এখলাছ জানতে পারে বিথির সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে মনিরের। মনির যখন জানতে পারলো এখলাছ এ বিষয়টা জেনে গেছে, তখন পূর্বের জের ধরে এখলাছকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে মনির। পরিকল্পনানুযায়ী এখলাছকে হত্যার জন্য ২০ লক্ষ টাকায় দুইজন কিলারকে ভাড়া করে মনির। তার মধ্যে কিলারদের ১১ লক্ষ টাকা অগ্রীম প্রদান করা হয়। ভাড়াটে কিলাররা এখলাছকে হত্যা করে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ফেলে দেয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।