কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ২০টি ব্লকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্লকের জন্য একটি প্রশাসনিক ও পরিসেবা ইউনিট ও একটি গোডাউন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে সকল ধরনের সেবা প্রদান সহজতর হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া ক্যাম্পের ভিতর আইন শৃংখলা রক্ষায় নতুন পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পর্যপ্ত আনসার সদস্য মোতায়েন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বুধবার কক্সবাজার সার্কিট হাউজে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় বিষয়ক এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মকর্তাদের সার্বিক কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় সংসদ সদস্য আসিকুল্লাহ রফিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ্ কামাল, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামসহ স্থানীয় প্রতিনিধি ও মন্ত্রণালয়র উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, ৪ লক্ষ ২০ হাজার লোক ধরে প্রথমে ৮৪ হাজার শেড নির্মাণের পরিকল্পণা নেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭০ হাজারের অধিক শেড নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার সেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যা দেশী বিদেশী এনজিওদের সহায়তায় দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। সেডগুলো সাময়িক সময়ের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। অতি দ্রুত এটি নির্মাণ করা হবে বলে ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় উপপরিচালক সভাকে অবহিত করেন।
কুতুপালং ক্যাম্পের বাইরে যেসব ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা থাকছেন ক্রমান্বয়ে তা গুটিয়ে একই ক্যাম্পে সবাইকে রাখা হবে বলে সভায় জানানো হয়। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে বলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের কমিশনার আবুল কালাম সভাকে অবহিত করেন।
সভায় আরও জানানো হয় ক্যাম্প এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৮ কিলোমিটার ও এলজিইডি ৯ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ টি গোডাউন নির্মাণের অংশ হিসেবে ইওতামধ্যে ৫ টি গোডাউন নির্মিত হয়েছে। বাকী ৯টির নির্মাণ কাজ এ সপ্তাহে শেষ হবে। খাদ্য সরবরাহ প্রসঙ্গে সভায় জানানো হয় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ৫ লক্ষ ২০ হাজার লোকের খাদ্যের সংস্থান করবে। এর বাইরে কেউ বাকী থাকলে দেশী বিদেশী সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হবে।
স্বাস্থ্য পরিসেবা সম্পর্কে সভায় জানানো হয় ইতোমধ্যে সরকারীভাবে ক্যাম্পে ৩৬টি কমিউনিটি হাসপাতাল ইউনিট করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৫ হাজার গর্ভবতী মহিলাকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। ৭০ হাজার লোককে বিভিন্ন ধরনের টিকা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫০০ লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১৭৫০০ লেট্রিন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯০০ সেনিটারী টয়লেট, ১৫২৮টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। এছাড়াও ১৪ টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ৭টি ওয়াটার ট্রাকের মাধ্যমে খাবারের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
বর্ধিত ক্যাম্প এলাকা আলোকিত রাখতে ৯ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে সভায় জানানো হয়। প্রত্যেক খুটিতে স্ট্রিট ল্যাম্প লাগানোর অনুরোধ করেন মন্ত্রী। ইতোমধ্যে ৬১ হাজার লোকের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে বলে সেনাবাহিনী থেকে জানানো হয়। প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ হাজার লোকের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বলে জানান তারা।