তাঁর ভারী উইলোর উপর ভর করে আসমুদ্র হিমাচলকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি ভারতের ‘লিটল মাস্টার’ সচিন তেন্ডুলকর। হেন কোনও রেকর্ড নেই যা সচিনের নামের পাশে লেখা আছে। সেটা সর্বাধিক রান করার নজির হোক। কিংবা ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি’ করার মাইলস্টোন। সচিন সবার শীর্ষে।
সচিন ভারতের প্রথম ক্রীড়াবিদ যিনি দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পেয়েছিলেন। এছাড়া তাঁর বাড়ির ক্যাবিনেটে পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ, রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরষ্কার, অর্জুন পুরষ্কার তো আছেই। বাইশ গজে এহেন সচিন বারবার বিধ্বংসী মেজাজে ধরা দিলেও, মাঠের বাইরে তাঁর মানবিক রূপ বহুবার দেখা গিয়েছে। ‘আপনালয়’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রতি বছর ২০০ জন ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক সচিন দেব বর্মনকে পছন্দ করতেন প্রয়াত রমেশ তেন্ডুলকর। তাই ছোট সন্তানের নাম রেখেছিলেন সচিন। মধ্যবৃত্ত পরিবারের সচিন আর পাঁচটা ছেলের মতো পাড়া ও স্কুলে দুষ্টুমি করে বেড়াতেন। সঙ্গে চলতো সাহিত্য সহবাসের বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা। সেটা বুঝতে পেরে ওঁর দাদা অজিত তেন্ডুলকর ছোট ভাইকে শিবাজী পার্কে নিয়ে চলে যান। সালটা ১৯৮৪। শুরু হয়ে যায় প্রয়াত রমাকান্ত আচরেকরের তত্ত্বাবধানে ক্রিকেট পাঠ।
তবে রমাকান্ত আচরেকরের অধীনে কোচিং এত সহজে শুরু হয়নি। প্রথম কয়েকদিন ছোট্ট সচিনের ব্যাটিং দেখার পর দাদা অজিতকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে অজিতের অনেক অনুনয় বিনয়ের পর রমাকান্তের মন গলে যায়। একদিন একটি গাছের আড়ালে খুদে প্রতিভার ব্যাটিং দেখেছিলেন। সেটা দেখার পরেই সচিনকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান তিনি। শুধু তাই নয়। সচিনের সঠিক ক্রিকেট বিকাশের জন্য স্কুলও বদলে ফেলেছিলেন প্রয়াত কোচ।
১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ১৫ বছর ২৩২ দিন বয়সে মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক ঘটান তিনি। অবশ্য গুজরাতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তাঁর রাজকীয় অভিষেক ঘটেছিল। ১২৯ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থেকে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে শতরান করার নজির গড়েছিলেন। এমনকি দিলীপ ট্রফি ও ইরানি ট্রফির অভিষেক ম্যাচেও তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি শতরান করেছিলেন। সেই রেকর্ড এখনও অক্ষত।
সেই শুরু। মাত্র ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর টেস্ট অভিষেক ঘটে যায়। সেই শুরু। এরপর দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে ক্রিকেট দুনিয়াকে অগণিত সোনালি মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন এই ‘লিটল মাস্টার’। এর সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় হল ২০১১ সালের ২ এপ্রিল ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ জয়।
নয় বছর হয়ে গেল। তাঁর নামের পাশে এখন ‘প্রাক্তন’ শব্দ লেখা আছে। তবুও এখনও ইউ টিউবে তাঁর অন ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, আপার কাট দেখার জন্য একই রকম ভিউ বাড়ে। ‘স্যাচিন…স্যাচিন…স্লোগান এনে দেয় মুক্ত বাতাস।