২০১৯–এর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার দুই নেতার ভাষণের ওপর দৃষ্টি রয়েছে গোটা দেশবাসীর। ভারতে আজ শুক্রবার লোকসভা অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাববের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাবের এই দ্বৈরথে মুখোমুখি হচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের লোকসভায় গত বুধবার নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও তেলেগু দেশম পার্টিসহ বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাবটি গ্রহণ করে শুক্রবার এর ওপর আলোচনা ও ভোটের দিন ধার্য করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
শুক্রবার (২০ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক চলবে। তারপর হবে ভোটাভুটি। তবে এই ভোট মোদি সরকারের ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে লোকসভায় পর্যাপ্ত সংসদ সদস্য (২৭৩ জন) রয়েছে মোদি সরকারের।
তারপরও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ও শাসক দল উভয়েরই শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই অনাস্থা প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়ে যাবে কয়েকমাস পরেই। এর আগে মোদি বিরোধীদের কৌশল, নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যা কিছু ঘটেছে, তার সবটা তুলে এনে এনডিএ সরকারকে কোণঠাসা করা।
আজকের আলোচনায় ওঠে আসবে নোট বাতিল, জিএসটি থেকে শুরু করে লাভ জিহাদ, গোরক্ষার নামে গণপিটুনি এবং ললিত মোদি থেকে নীরব মোদি পর্যন্ত নানা কেলেঙ্কারির কথা। এই তালিকায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে গত বছরে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমা রাখা কালো টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও। পাশাপাশি এই এক প্রস্তাবে বিজেপি–র সঙ্গে তাদের শরিক দলগুলির সম্পর্ক কতটা মধুর তা যাচাই করতে পারবে বিরোধী শিবির।
এরমধ্যে বিরোধীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন শত্রুঘ্ন সিনহা, কীর্তি আজাদ ও সাবিত্রীবাই ফুলে সহ ছয়জন বিক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদকে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট করাতে, বা নিদেনপক্ষে ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত করিয়ে দিতে। তাহলে তাদের পক্ষে বিজেপির মধ্যে মতভেদের কথা বড় করে প্রচার করা সম্ভব হবে। তবে শত্রুঘ্ন সিনহা বলেছেন, তিনি দলের হুইপ মেনে চলবেন।
অন্যদিকে, অনাস্থা প্রস্তাব যারা এনেছে সেই টিডিপি–র এক সাংসদ দিবাকর রেড্ডি আজ জানিয়েছেন, তিনি আজ শুক্রবার লোকসভায় যাবেন না।
সরকার পক্ষও বসে নেই। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। পাশাপাশি বিরোধীরা যে মোটেই ঐক্যবদ্ধ নয়, তা দেখাতে এআইএডিএমকে, টিআরএস, বিজু জনতা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এই তিনটি দল আলোচনায় অংশ নিলেও সম্ভবত ভোটাভুটিতে অংশ নেবে না। এদের মোট সাংসদ সংখ্যা ৬৮। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহেরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন এদের দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট করাতে, যাতে বিরোধী শিবিরের ঐক্যের ছবিটা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
এদিকে অনাস্থা প্রস্তাবে চিরাচরিত দু’দিনের আলোচনার সময়সীমা এবার একদিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিজেপি–র ভরসা, দিনভর একটানা যতই সরকারের সমালোচনা হোক না কেন, দিনের শেষে শেষ কথা বলবে ভোটাভুটির ফল এবং মোদির ভাষণ। বিজেপির আশা, সেক্ষেত্রে শেষ হাসি হাসবেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা।
লোকসভার বর্তমান সাংসদ ৫৩৩। স্পিকারকে বাদ দিয়ে ৩১২ জন সাংসদ রয়েছেন এনডিএ–র দিকে। বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ২৭৪ জন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ৬টি আসন বেশি।