ডিএমপি নিউজঃ শত-সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে। তবে এদের দুরন্তপনা দেখে মনে হবে এ জায়গা যেন তাদের অতি চেনা, আপন নিবাস। ইট-পাথরের নগরী ঢাকার কাছেই এমন দৃশ্য দেখতে চাইলে আপনাকে চলে আসতে হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রতিবারের মতো চলতি শীত মৌসুমেও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় প্রায় ২২টি জলাশয়ের মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে’র দুটি জলাশয়ে অতিথি পাখির পদচারণা চোখে পড়ার মতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর শীতপ্রধান দেশের পাখি তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার পাখি অতিথি হয়ে আসে বাংলাদেশে। অতিথি পাখিরা সাধারণত আসে হাওর এলাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে। শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর-জানুয়ারিতে অতিথি পাখি আসে, আবার মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পাখি আসে, তার মধ্যে বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি অন্যতম। এ ছাড়া অন্য প্রজাতির পাখির মধ্যে আছে মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি।
এদিকে ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ এই প্রতিপাদ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘পাখি মেলা-২০১৯’। পাখি সংরক্ষণে গণ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পাখির নিরাপদ আবাস তৈরীর লক্ষ্যেই দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
শুক্রবার (১১ জানুয়ারি’১৯) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে হলে সুন্দর এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে পরিব্রাজক পাখি নিয়মিতভাবে এখানকার জলাশয়ে আসে। পাখি মেলায় এসে বাচ্চারা নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এতে পাখির প্রতি মমত্ব এবং সংযোগ বাড়ছে। এখন সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, পাখি মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান প্রমুখ।