অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মোবাইল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থ আত্মসাৎকারী একটি প্রতারক চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- আসাদুল ইসলাম। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও দুটি সিম কার্ড উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গত ০৩ জুন ২০২২ (শুক্রবার) রাত ০৯:৩০ টায় যাত্রাবাড়ী থানার মীর হাজীরবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ডিএমপি নিউজকে বলেন, জনৈক সাহিদ তার Facebook ID থেকে মাও মাহমুদ হাসান নামীয় Facebook ID তে একটি ONE Plus 7 pro মোবাইল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখতে পান। এরপর জনৈক ব্যক্তি ঐ Facebook আইডির অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সাথে মেসেঞ্জারে ও ইমুতে কথা বলেন। কথা বলার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি যোগাযোগের জন্য ০১৭৪৩২৪৯৫৭৩ নাম্বার প্রদান করেন। পরবর্তীতে জনৈক ব্যক্তি মোবাইল ফোনটি ক্রয়ের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে একটি নগদ হিসাব নাম্বার (০১৭৯৮৯২২২০৮) প্রদান করেন। তিনি নগদের হিসাব নাম্বারটিতে মোবাইলটি ক্রয় বাবদ ১৭,৭০০/- টাকা প্রেরণ করেন। টাকা পাঠানোর পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মোবাইল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিং কপি প্রেরণ করেন। জনৈক ব্যক্তি বাংলা বাজার শাখার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিং রশিদ দেখালে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উক্ত রশিদটি ভুয়া বলে জানায়। পরবর্তীতে তিনি ০১৭৪৩২৪৯৫৭৩ নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলে উক্ত নাম্বারটি বন্ধ পান এবং প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরবর্তীতে জনৈক ব্যক্তি সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, অনলাইন মনিটরিং ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আসাদুল ইসলাম নামে একজনকে শনাক্ত করা হয়। গত ০৩ জুন ২০২২ যাত্রাবাড়ী থানার মীর হাজীরবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জব্দকৃত মালামালসহ আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আসাদুল একটি অনলাইন প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি প্রথমে অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম কার্ড সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে উক্ত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে বিক্রয় ডটকমসহ এ জাতীয় বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট/ আইডি খোলে। এরপর বিভিন্ন রকমের মোবাইল বিক্রির আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন/ পোস্ট দেয়। পরবর্তী সময়ে উক্ত বিজ্ঞাপন/ পোস্ট দেখে কেউ মোবাইল ক্রয়ের ইচ্ছা পোষণ করলে প্রতারক চক্রটি অল্প কিছু টাকা গ্রহণ করে মোবাইলটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর আশ্বাস দেয় ও বুকিং করা হয়েছে মর্মে জানায়। পরবর্তীতৈ কুরিয়ার সার্ভিসের ভুয়া রশিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইমো, হোয়্যাটস অ্যাপ বা ফেইসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রেরণ করে সম্পূর্ণ টাকা দাবি করে। ক্রেতা কুরিয়ার সার্ভিসের রশিদ দেখে নিশ্চিত হয়ে সম্পূর্ণ টাকা প্রতারককে প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে উক্ত কুরিয়ার সার্ভিসের রশিদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে জানা যায় যে উক্ত রশিদটি ভুয়া।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সূত্রাপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরামর্শঃ
ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্য গ্রহণ করা।
স্বাভাবিক নয় এরকম বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলা, যেমন অবিশ্বাস্য রকমের কম দাম এবং দ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে হবে এমন প্রতিশ্রুতিগুলো এড়িয়ে চলা।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর দিক নির্দেশনায়, অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান বিপিএম (সেবা) এর তত্ত্বাবধানে এবং অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।