ডিএমপি নিউজঃ উনি নাইজেরিয়ান নাগরিক। থাকেন বাংলাদেশে। পেশায় ফুটবল খেলোয়ার। এর বাইরেও তার আরেকটি বড় পরিচয় আছে। তিনি ফেসবুক থেকে আইডি সংগ্রহ করে প্রথমে বন্ধুত্ব করেন। তারপর বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কারের প্যাকেট পাঠান। যাতে বাংলাদেশী মুদ্রায় কোটি টাকার সমপরিমান পাউন্ড বা ডলারসহ বিভিন্ন পুরষ্কার ইত্যাদি লোভনীয় অফার থাকে। ওর নাম Henry Esiaka (40). ওর সাথে যুক্ত থেকে ধরা পড়েছে তেজগাঁওয়ের মোঃ ইসমাইল হোসেন (৪৮)।
২ মার্চ, ২০১৮ বেলা আড়াইটায় তেজগাঁও থানার পূর্ব তেজতুরী পাড়া এলাকা হতে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম।
ঘটনার শুরু যেভাবেঃ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পশ্চিম কাফরুল এলাকার একজন স্কুল শিক্ষিকার সাথে william david নামের আইডি এর সাথে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে ফেসবুকে পরিচয় হয়। william david তার ফেসবুক আইডি থেকে ওই স্কুল শিক্ষিকার ফেসবুক আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। তিনি গ্রহণ করার পর তাদের মধ্যে নিয়মিত ফেসবুকে যোগাযোগ হয়।
ওই সময় william david তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চায়। তিনি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এরই মধ্যে william david তার খুব ঘনিষ্টতা প্রকাশ করে তাকে পুরষ্কার পাঠাতে চেয়ে তার ঠিকানা চায়। পরে তিনি তার বাসার ঠিকানা দেন।
এরপর গত ৭/১০/২০১৭ তারিখ ওই শিক্ষিকার মোবাইল নম্বরে Ben carlos পরিচয় দিয়ে একজন ফোন করে। তিনি জানান সে Delta courier service ltd তে চাকুরী করেন। উক্ত কুরিয়ার এর মাধ্যমে Mr. William David তার নামে ইউকে থেকে একটা পার্সেল পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এর Custom authority, airport duty charge বাবদ ৪৫,০০০ টাকা দাবী করেছে।
ওই শিক্ষিকা ১৭/১০/২০১৭ তারিখ কাফরুলের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে তার দেওয়া অ্যাকাউন্টে ৪৫,০০০ টাকা প্রেরণ করেন। পরে Carlos উক্ত পুরষ্কার এর প্যাকেট দেবো দিচ্ছি বলে। ওই দিনই Carlos আবার ফোন করে জানায় উক্ত পার্সেলের ভিতরে অনেক পাউন্ড আছে, যা একজন সিনিয়র কাস্টমস্ অফিসারের নজরে আসে বিধায় পার্সেলটি ছাড় করতে অতিরিক্ত ১,৪০,০০০ টাকা দিতে হবে। তখন ওই শিক্ষিকা টাকা সংগ্রহের জন্য সময় চান। Carlos বলে ঐ দিনের ব্যাংকিং সময়ের মধ্যেই দিতে হবে তা না হলে তার নামে মানি লন্ডারিং কেস হয়ে যাবে। একপর্যায়ে তিনি রাজি হলে ঐ টাকা প্রদানের জন্য Carlos আরো একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান করে তিনি ওই দিনেই উক্ত একাউন্ট নম্বরে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা পাঠান। উক্ত টাকা পেয়ে Carlos তাকে জানায় সময়মত তিনি পার্সেল পেয়ে যাবেন।
এরপর ১৮/১০/২০১৭ Carlos ফোনে তাকে আবারো জানায় উক্ত পার্সেলের ভিতর ১,০০,০০০ পাউন্ড অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় এক কোটি সাত লক্ষ সাতাত্তর হাজার চারশত আশি দশমিক উনচল্লিশ টাকা থাকায় মোট টাকার ৩% ট্যাক্স হারে আরও তিন লক্ষ তেইশ হাজার তিনশ বিশ টাকা জমা দিতে হবে। তখন তিনি ও তার ছেলে রাহাত (২০) Carlos এর সাথে দেখা করতে চাইলে সে দেখা করতে অসম্মতি জানায়। পরে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার চক্রে পড়েছেন।
এদিকে একই ধরনের প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে তুরাগের আরেক ভদ্র মহিলা। তিনি ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। পরে একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে ইংরেজীতে জানায়, এক লক্ষ টাকা দিলে ঢাকার মাস্টার মাইন্ড স্কুলে চাকুরী হবে। বিভিন্ন কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি তার দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠান। পরে তিনি ঐ ব্যাক্তির ফোন বন্ধ পান। তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে তেজগাঁও থানার পূর্ব তেজতুরী পাড়া এলাকা হতে এই দুই প্রতারককে গ্রেফতার করে। এই ঘটনার সাথে জড়িত আরো দুই প্রতারকের হাতকড়া পড়াতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পিবিআই।
পিবিআই সূত্রে আরো জানা যায়, পলাতক এক প্রতারকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একাধিক ভিকটিমের প্রায় ২০/২২ লক্ষ টাকা যায়। গ্রেফতারকৃত ইসমাইল উক্ত টাকা উত্তোলন করে তাদের ভাগের ১০% অংশ রেখে বাকি টাকা গ্রেফতারকৃত নাইজেরিয়ান Henry Esiaka এর হাতে পৌছে দেয়।
উল্লেখ্য, Henry Esiaka ও ইসমাইল ২০১৬ সালের শেষ দিকে একই সাথে দুইজনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় পরিচয় ও সখ্যতা হয়। তারা জেল হাজত হতে জামিনে মুক্ত হয়ে এই লোভনীয় অফার প্রতারণায় লিপ্ত হয়।