ডিএমপি নিউজঃ আব্দুল আজিজ(ছদ্মনাম), থাকেন ঢাকার কাঁঠাল বাগানে। কাজ করেন নির্বাচন অফিসের ছোট্ট একটি পদে। সামনে ঈদ। নিজের ব্যস্ততা ও যানজটের কারণে মার্কেটে না গিয়ে দুটি মেয়ের জন্য দুটি জামার অর্ডার করেছিলেন অনলাইনে। কিন্তু মিরপুরের এসএ পরিবহন থেকে পার্সেল বুঝে নিয়ে বাসায় গিয়ে খুলে দেখেন খুবই নিম্ন মানের একটি শাড়ি। যা বাসাবাড়িতে ব্যবহারের পর হকারদের নিকট মানুষ এমনিই দিয়ে দেয়। অল্প কয়েক হাজার টাকার জন্য তিনি ঝামেলায় না গিয়ে আইনের আশ্রয় নেননি।
আব্দুল আজিজের মত মতিঝিলের প্রেস ব্যবসায়ী দেলোয়ার, পূর্বরাজা বাজারের আইয়ুব অনলাইনে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অর্ডার করে ব্যবহার অযোগ্য পণ্য পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
এভাবে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকের নিকট নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ বাপ্পি হাসান, মোঃ আরিফুল ওরফে হারিসুল, মোঃ সোহাগ হোসেন, মোঃ বিপ্লব শেখ ও নুর মোহাম্মদ।
রবিবার (১৭ এপ্রিল ২০২২) হাজারীবাগের শংকর পশ্চিম ধানমন্ডির একটি বাসায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি লালবাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ী চুরি প্রতিরোধ টিম।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যবহার অযোগ্য ও অতি নিম্ন মানের পুরাতন ছেঁড়া শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি পিসসহ বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আইফোন, ল্যাপটপ ও ২১টি অনলাইন শপিং পেইজ।
আজ সোমবার (১৮ এপ্রিল ২০২২) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ) মোঃ রাজীব আল মাসুদ, বিপিএম-সেবা।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ”অতিমারী করোনাকালীন সময়ে মানুষ অনেকটাই অনলাইন শপিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই মার্কেটে গিয়ে ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে কেনা-কাটা করছেন। এ সুযোগে কিছু প্রতারক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আকর্ষণীয় ড্রেসের কমমূল্যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্ডার করে প্রতারিত হচ্ছেন। নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ডিবি পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে”।
গ্রেফতারকৃতদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে ডিবি এই কর্মকর্তা বলেন, “অনলাইন প্রতারক চক্রের এ সদস্যরা ফেইসবুকে পেইজ খুলে ভালো মানের পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে কেউ অর্ডার করলে এসএ পরিবহনের মাধ্যমে অর্ডারকৃত মাল পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু গ্রাহক যখন পার্সেলটি বাসায় নিয়ে খোলেন তখন তিনি হতভম্ব হয়ে যান। কারণ সেই পার্সেলে থাকে নিম্নœমানের ব্যবহারের অযোগ্য ও নষ্ট মালামাল। গ্রাহকরা যখন ওই নাম্বারে ফোন দেন তখন আজ না কাল বলতে থাকে এবং একসময় তাকে ব্লক করে দেন। তারা একটি পেইজ কিছুদিন ব্যবহার করার পর গ্রাহকগণ প্রতারিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন বাজে কমেন্ট করায় তারা পরবর্তীতে নতুন পেইজ খুলে একইভাবে প্রতারণা করে”।
গ্রাহকরা অল্প কয়েক হাজার টাকার জন্য ঝামেলা এড়াতে আইনের আশ্রয় নেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “এভাবে প্রতারণা করে তারা প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ এবং মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার প্রতারণা করছে। গ্রাহক প্রতারিত হওয়ায় আস্থা হারিয়ে দেশের ই-কমার্স সাইট প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে”।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ, বিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনায় অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান আরাফাত, বিপিএম, পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাস এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।