জেলা সদরে সরকারিভাবে নির্মিত হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার আগামীকাল রোববার চালু করা হবে। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড’র অপর পাশে চরজংলা এলাকায় ২ একর জমির উপর প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে একসাথে প্রায় ১২ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই খামারটি চালুর মাধ্যমে এই অঞ্চলের খামারিদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পুরন হতে যাচ্ছে।
জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, এখানে আগামীকাল খুলনা থেকে ১মাস বয়সের ১ হাজার হাঁসের বাচ্চা আনা হবে। এই বাচ্চা দিয়ে প্রাথমিকভাবে খামারের কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে আরো হাঁসের বাচ্চা আনা হবে। পরবর্তিতে এখান থেকেই উন্নত জাতের হাঁসের ডিম ও বাচ্চা সরবরাহ করা যাবে জেলাসহ আশপাশের এলাকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় ছোট–বড় মিলিয়ে প্রায় ৭’শ টি হাঁসের খামার রয়েছে। এর মধ্যে সাধারন হাঁসের সংখ্যা রয়েছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৮ টি ও রাজহাঁস রয়েছে প্রায় ২ লাখ। একটি উন্নত জাতের হাঁস বছরে আড়াই’শ থেকে পৌনে৩’শ ডিম দেয়। এই খামারে প্রজননের মাধ্যমে উন্নত মানের ডিম উৎপাদন ও বিক্রি করা হবে। ডিম কিনে চাষিরা নিজেরা বাচ্চা ফুটাতে পারবে। খামারিরা চাইলে বাচ্চা কিনেও প্রতিপালন করতে পারবে। আর প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে হাঁস পালনকারীদের।
এদিকে জেলায় হাঁস প্রজনন খামার চালুর খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে খামারিরা। আগে বিভিন্ন জেলা থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হতো তাদের। এতে করে অর্থ ও সময় দুটোই নষ্ট হতো। আর সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক বাচ্চা মারা যেত। ফলে আশানুরুপ লাভ হতোনা অনেকের।তাই প্রজনন খামারটি চালুর মাধ্যমে সেই সমস্যা থাকছেনা তাদের। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
উপজেলা সদরের চর–চটকিমারা এলাকার খামারি মোসলেউদ্দিন ও আব্দুল হাই বলেন, চারদিকে নদী বেষ্টিত ভোলায় প্রচুর চরাঞ্চল ও বিলাঞ্চল রয়েছে। এসব স্থানে অনেকই এখন হাঁস পালনের প্রতি আগ্রহী। স্থানীয়ভাবে হাঁসের বাচ্চা পাওয়া গেলে খামারির সংখ্যা আরো বাড়বে।
ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: কামাল হোসেন বলেছেন, দ্বীপ জেলায় হাঁস প্রজনন খামার নির্মাণ সরকারের একটি সময়উপযোগী সিদ্ধান্ত। এই অঞ্চলে হাঁসের প্রাকৃতিক খাবার শামুক প্রচুর পাওয়া যায়। ফলে সরকারি হাঁসের খামার থেকে বাচ্চা পাওয়া গেলে খামারিরা লাভবান হবে। কৃষি সমৃদ্ধ জেলা আরো সমৃদ্ধ হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: দীনেশ চন্দ্র মজুমদার আরো বলেন, এসব হাঁসের উৎপাদিত ডিম থেকে হ্যাচারির মাধ্যমে বাচ্চা তৈরি করা হবে। উন্নত জাতের বাচ্চা খামারিসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ সল্প মূল্যে ক্রয় করতে পারবে। এছাড়া সরকারি এই খামারে ইতোমধ্যে ৯জন কর্মচারি ও ১ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা।