কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান এবং ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার আজ ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিটের সবটুকু সামর্থ দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি আগাম তথ্যের ভিত্তিতে কোন লোকাল জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করে আস্তানাটিকে ধ্বংস করতে । গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। আস্তানাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগনের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা মনে করি, জঙ্গিবাদ দমন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার কাজ নয়। এক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ প্রকৃতপক্ষে মানবতার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, সর্বোপরি সকলের বিরুদ্ধে ।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ২২ তারিখে ঝিনাইদহ কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের নেতৃত্বে অপারেশন ‘সাউথ প’ পরিচালিত হয় এবং তারই কয়েকদিন পরে ২৬ ও ২৭ তারিখে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানা এলাকায় পরিচালিত হয় অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’ ।
অপারেশন ‘সাউথ প’তে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এটাকে তারা বিস্ফোরক ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করত। সেই বাসার মালিক আব্দুল্লাকে না পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে চাপাইনবাবগঞ্জের নিহতদের মধ্যে আব্দুল্লার ডেডবডি আছে বলে আমরা ধারনা করছি।
চাপাইনবাবগঞ্জে অপারেশন ঈগল হান্টের ব্যাপারে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ঈগল হান্ট’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সেখানে একজন গর্ভবতী নারী ও শিশু ছিল, তাদের সাথে নেগোসিয়েশনের কারনে অপারেশনে দেড়দিন সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের উদ্ধার করা গেছে। নিহতদের মধ্যে মধ্যে কেউ কেউ বিষ্ফোরণে, কেউ হয়তো গুলি বিনিময়ে মারা গেছে।যার নামে ঘড় ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সেই রফিকুল ইসলাম আবুসহ মোট ৪ জন এ অভিযানে মারা গেছে।
দুটি অভিযানকে সফল আখ্যা দিয়ে মনিরুল ইসলাম জানান, যারা অভিযান পরিচালনা করেছে, তারা সবাই অক্ষত আছে। তাদের অভিযানে চাপাইনবাবগঞ্জ ও দক্ষিনাঞ্চলের ঝিনাইদহ ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করা গেছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, চাপাইনবাবগঞ্জে যে আবু মুসা মারা গেছে তার পুরো পরিবার জামাত, তার শ্বশুরের পরিবার জামাত এবং বলা হয় আবু বিয়ের পরই এ পথে এসেছে অর্থাৎ বউয়ের হাত ধরে এসেছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ঢালাওভাবে বলা যাবে না, আবার উড়িয়েও দেয়া যাবে না। কেস টু কেস বিবেচনা করতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, তাদের অনেকেই জামাত শিবির থেকে এসেছে।
বিস্ফোরক এবং অস্ত্রের সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানের অধিকাংশ বিস্ফোরক উপাদানই দেশের ভিতরের। এর আগে চোরাইপথে যে বিস্ফোরক দ্রব্য, অস্ত্র আসত তার কিছু কিছু লাইন দেশের এপার ওপার দু’পাশেই সমন্বয় করে আমরা সেই সাপ্লাই লাইনগুলো ধ্বংস করেছি, করতে পেরেছি। ফলে তাদের সাপ্লাই লাইনটা আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। এখন তারা এগুলো দেশের ভিতরে প্রচলিত জিনিসের মধ্য থেকে সংগ্রহ করছে। এগুলো খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া আইটেম থেকে তৈরি, ফলে এগুলোর ধ্বংস ক্ষমতার চাইতে পরিমাণটা বেশি। প্রকৃতপক্ষে তাই ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও বেশি।
অভিযানে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, চাপাইনবাবগঞ্জ ও ঝিনাইদহে আগাম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে । এএফডি, অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিসসহ যারা এর সাথে সহযোগিতা করছে তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।