সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাষ্টমী। দেবীর সন্ধিপূজা এবং রামকৃষ্ণ মিশনগুলোতে কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
প্রথম বর্ষিয়া থেকে ষোড়শি, একটি মানবীকে দেবী জ্ঞানে আরাধনাই কুমারী পূজা। পূজার দিন, তাঁকে স্নান করিয়ে, প্রসাধন ও অলঙ্কারে ভূষিতা করে পূজক তাঁকে দেবী দুর্গার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে পূজা করেন।
শাস্ত্র মতে, কন্যা রজস্বলা হওয়ার আগে পর্যন্ত কুমারী পূজার যোগ্যা। এই পূজার মাহাত্ম কীর্ত্তনে তন্ত্র পঞ্চমুখ। বলা হয়, তিনি সাক্ষাত যোগিনী, পরম দেবতা, “কাত্যায়নায় বিদ্মহে, কন্যা কুমারী ধীমহী তন্নো দুর্গৈঃ প্রচোদয়া”-হে দুর্গা তুমি কন্যা, তুমি কুমারী, আমরা কাত্যায়নকে জানব, তুমি আমাদের সহায় হও। হে কাত্যায়ন ‘ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমানমি, ত্বং কুমার উত বা কুমারী’।
পরমহংস রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, “সব স্ত্রী লোকই ভগবতীর এক এক রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতেই তাঁর প্রকাশ অধিক”।
রাবন বধের জন্য মহামায়া যাতে রাবনকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের অনুকুল হন, সেই উদ্দেশ্যে দেবতারা মহামায়ার স্তব স্তুতি করতে থাকেন, দেবী প্রসন্না হন। দেবী পরামর্শ দেন অকাল বোধনের। পরামর্শ মতো দেবতারা পৃথিবীতে এসে দেখেন এক নির্জন স্থানে বেল গাছের শাখায় নিদ্রিতা এক বালিকা, “নিদ্রিতাং তপ্ত হেমাভাং বিম্বোষ্ঠীং তনু মধ্যমাম্…” দেবতাদের কাতর প্রার্থনায় বালিকা জাগ্রত হন এবং উগ্রচণ্ডা নামক যুবতীতে রূপান্তরিত হন ও বর প্রদান করেন যাতে সবংশে রাবন বধ সাধিত হয়। “ঐং রাবনস্য বধার্থায় রামস্যানু গ্রহায় চ…”।
এতো গেল শাস্ত্রীয় বক্তব্য। কিন্তু আজ যখন চতুর্দিকে অবক্ষয়ের চিহ্ন- ধর্ষণ, খুন, শ্লীলতা হানি মহামারির আকার ধারণ করছে, যখন, কন্যা ভ্রুণ হত্যা, পন প্রথার শিকার হচ্ছেন নারীরা, তখন পুরান-শাস্ত্র-তন্ত্রের এই নারীশক্তির মহিমা কীর্ত্তন এক আদর্শ ভাবনার বীজ বপন করে। আশা একটাই, এই বীজ মহীরুহ হোক, শুভবুদ্ধির উদ্বোধনে প্রকৃত কুমারী পূজার ব্যাপক প্রসার ও চর্চা শুরু হোক। মহামায়ার কাছে এই হোক প্রার্থনা।