ডিএমপি নিউজঃ বর্ণাঢ্য আয়োজন বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ শুরু হচ্ছে। ছয় দিনব্যাপী এ পুলিশ সপ্তাহ চলবে ১০ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন সকাল সাড়ে নয়টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠে সুশৃঙ্খল ও নয়নাভিরাম বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। তিনি সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহীদলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এসপি মোঃ ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ এর মূল প্রতিপাদ্য-‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিগত ২০১৯ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে “বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)”, ২০ জনকে “রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)” এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে “বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা” এবং ৫৬ জনকে “রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা” প্রদান করা হবে। এএসআই (নিরস্ত্র) মরহুম মোঃ আক্তার হোসেনকে বিপিএম (মরণোত্তর) পদক প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদেরকে পদক প্রদান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করবেন।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন,“ ‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অনন্য ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। মাদকের বিস্তার রোধ ও সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধ দমনেও পুলিশ যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত। জাতিসংঘের আওতায় পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা উঁচুমানের পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন, যা বাংলাদেশের গৌরব ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেছেন, “ বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদক নির্মূল এবং চোরাচালান দমনে পুলিশের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে।
বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ ও জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমে এসেছে গতিশীলতা এবং কর্মচাঞ্চল্য। পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তির সংযোজন, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিশেষায়িত নতুন নতুন ইউনিট গঠনসহ বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীবর্গের সম্মেলন, আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র/মাদক উদ্ধার প্রভৃতি পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সাথে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সমাবেশ, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে আইজিপির সম্মেলন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ইত্যাদি। আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পুলিশ সপ্তাহের নানা আয়োজনের।
পুলিশ সপ্তাহে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।