আজ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। “শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে আজ পালিত হচ্ছে এই দিবসটি। দিনটি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন।
প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দিনটি পালিত হলেও এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোডপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে এক বার্তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমজীবী মেহনতি ভাই বোনদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা থেকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সবার আগে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কোনো প্রকার জনসমাগম হয় এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী ।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক এ মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মালিকগণকে প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখতে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা যেমন- শিল্প পুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে সাথে নিয়ে করোনা ভাইরাসের এ যুদ্ধে সরকার অবশ্যই সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খবর বাসস।
যেভাবে এলো এই মহান মে দিবস:
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে।১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না-খাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চিন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এমনকি এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যেকোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া