হওয়ার কথা দু’দলের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে বিশ্লেষণ, সম্ভাব্য ফল নিয়ে নিয়ে আলোচনা। শিরোপা নির্ধারণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাউন্ডে বা ম্যাচে এমনটাই হয়ে থাকে। কিন্তু লা লীগার ২০১৬-১৭ মৌসুমের শেষ রাউন্ড নিয়ে চলছে উল্টোটা। বার্সেলোনার মিডিয়ায় জোর গুঞ্জন, রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে ম্যাচ ছেড়ে দেবে মালাগা। আর মাদ্রিদভিত্তিক মিডিয়ার সংশয়, ‘টেনেরিফাজো’র মতো রেফারিংয়ের শিকার হয়ে আবারও না শিরোপা বঞ্চিত করা হয় রিয়ালকে!
মাঠের বাইরের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্য দিয়ে আজ মাঠে গড়াচ্ছে লা লীগার শিরোপা নির্ধারণী তথা শেষ রাউন্ডের খেলা। সব ম্যাচ ছাপিয়ে দৃষ্টি মূলত দুটি ম্যাচে, মালাগা-রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা-এইবার। দুটির মধ্যে আবার লা মোসালেদার মালাগা-রিয়াল ম্যাচই মনোযোগের মূলে। এ ম্যাচটি জিতলে বা ড্র করলেই লা লীগায় নিজেদের ৩৩তম শিরোপাটি জিতবে রিয়াল। আর রিয়াল যদি হেরে যায়, সেক্ষেত্রে নিজেদের ম্যাচে জয় পেয়ে বার্সেলোনাই শিরোপা জিতবে। আবার বার্সা যদি হেরে যায়, সেক্ষেত্রে রিয়ালের জয়-পরাজয় বা ড্রয়ে কোনো সমস্যা নেই। চার বছর পর শিরোপা হাতে তুলবে লস ব্লাঙ্কোসরা।
কিন্তু ফলের এই হিসাব-নিকাশে নিজেদের খেলোয়াড়ি পারফরম্যান্সের চেয়ে বাইরের ভূমিকাই বেশি আবিষ্কার করছেন বার্সা আর রিয়ালের সমর্থক মিডিয়া ও দর্শকরা। বার্সা পক্ষের অভিযোগের ভিত্তি হচ্ছে মালাগা কোচের মন্তব্য। গত মাসে লা লীগায় বার্সাকে ২-০-তে হারিয়ে দিয়েছিল মালাগা। আশি-নব্বই দশকের রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মিকেল গঞ্জালেস মালাগার কোচের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে সেদিন ম্যাচশেষে বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদই চ্যাম্পিয়ন হবে। মাদ্রিদ থেকে আসা একজন মালাগার মানুষই হাত বাড়িয়ে সাহায্য করবে।’ ওই মন্তব্যের পর থেকেই এ নিয়ে সমালোচনায় সরব বার্সেলোনা। যার জের ধরে মালাগার মালিক আবদুল্লাহ আল-থানি বার্সেলোনার পাল্টা সমালোচনা করে টুইটও করেন। ক্লাব বার্সেলোনা এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানালে গত সপ্তাহে মালাগা মালিককে জরিমানা করে লা লীগা কর্তৃপক্ষ। বার্সা-মালাগার মধ্যে ক্লাব পর্যায়ে যখন এমন উত্তপ্ত অবস্থা, তখন লা লীগার শিরোপা নির্ধারণ হচ্ছে মালাগা-রিয়াল ম্যাচে। মালাগার কোচ যেহেতু আগেই সাবেক ক্লাবকে শিরোপায় সহযোগিতার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু বার্সা এটিকেই শিরোপার ‘বড় প্রভাবক’ হিসেবে ধরে নিচ্ছে। পাশাপাশি আরেকটি কথাও তুলছেন কেউ কেউ। রিয়াল শিরোপা জিতলে এক মিলিয়ন ইউরো পাবে মালাগা। চার বছর আগে মালাগা থেকে ইসকোর রিয়ালে যাওয়ার শর্তই ছিল এমন।
বার্সেলোনা যখন এই অভিযোগগুলো নিয়ে মশগুল, তখন রিয়াল কথা তুলছে রেফারিং নিয়ে। ১৯৯১-৯২ ও ৯২-৯৩ মৌসুমে টানা দুই বছর রিয়াল শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিল রেফারিংয়ের কারণে। ওই দু’বারও শেষ রাউন্ডে শিরোপা নির্ধারণ হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই রেফারির বাজে সিদ্ধান্তে ম্যাচ হেরেছে রিয়াল, আর শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। কাকতালীয়ভাবে দু’বারই প্রতিপক্ষ ছিল ক্যানারি আইল্যান্ডের দল টেনেরিফ। পরপর দু’বার শিরোপাবঞ্চিত হওয়ার ওই ঘটনাকে ‘টেনেরিফাজো’ বলে অভিহিত করে রিয়াল। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে গত পরশু মাদ্রিদভিত্তিক দৈনিক মার্কা শিরোনাম করেছে ‘এবারও কি আরেকটি টেনেরিফাজো?’
তবে বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, রিয়ালের এত শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আগের দু’বার জয় দরকার হলেও রিয়ালের এবার ড্র হলেই যথেষ্ট। আবার দলীয় ও রোনালদোর ফর্ম, চলতি মৌসুমের অ্যাওয়ে সাফল্য মিলিয়ে রিয়াল যোজন যোজন ব্যবধানে মালাগার চেয়ে এগিয়ে। আর রেফারিংও এখন পূর্বের চেয়ে এখনকার প্রযুক্তির সময়ে তুলনামূলক নিখুঁত। উদ্বেগ-অভিযোগের জবাব আছে বার্সেলোনার জন্যও। প্রথমত মালাগার এক মিলিয়ন ইউরো প্রাপ্তিতে কোনো লাভই নেই। কারণ হারলে এক মিলিয়ন তারা ঠিকই পাবে; কিন্তু সেই হার তাদের পয়েন্ট টেবিলের ১১ থেকে ১২ নম্বরেও নামিয়ে দেবে। আর লা লীগার টিভি স্বত্ব থেকে প্রাপ্ত লাভের ভাগাভাগি অনুসারে, ১১ চেয়ে ১২-তে নেমে গেলে প্রায় এক মিলিয়ন ইউরোর মতো কম পাবে মালাগা। দ্বিতীয়ত, মালাগা কোচ রিয়ালের জয় চাইলেও মাঠে খেলবেন খেলোয়াড়রা। সেই খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্তত দু’জন জোর গলায় বলেছেন, রিয়ালকে যে করেই হোক হারাতে হবে। দু’জনের একজন হচ্ছে সান্দ্রো রামিরেজ। বার্সার লা ম্যাসিয়ায় বেড়ে ওঠা এই ফরোয়ার্ড তো কোচের বিপরীত সুরেই বলেছেন, ‘আমি চাই বার্সেলোনা শিরোপা জিতুক। রিয়ালকে হারানোয় আমি ভূমিকা রাখতে চাই।’ একসময় অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে খেলা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইগন্যাসিও ক্যামাচোও ‘সর্বস্ব’ দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন।
এতসব বাদ দিয়ে রিয়াল আর বার্সা কোচের কথার দিকেই মনোযোগ দেওয়া যাক। জিনেদিন জিদানের গতকালের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘আমাদের ভাগ্য আমাদেরই হাতে। শেষ ম্যাচে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য দিয়ে খেলব।’ এনরিকের বক্তব্যও সোজাসাপ্টা, ‘বার্সেলোনা শিরোপা জিতলে খুবই দারুণ; কিন্তু না জিতলে চ্যাম্পিয়নদের অভিনন্দন জানাব।’